যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেন মাশরাফি

নিউজ ডেস্ক :

আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।

শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

মাশরাফি বিন মর্তুজা (জন্ম ৫ অক্টোবর ১৯৮৩) হলেন একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ, যিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক টেস্ট, ওয়ানডেতে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক ছিলেন এবং বর্তমানে নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। ইএসপিএন কর্তৃক পরিচালিত “ওয়ার্ল্ড ফেইম ১০০” এ বিশ্বের সেরা ১০০ জন ক্রীড়াবিদের মধ্যে অন্যতম। অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০টি উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে তিনি ৫ম বোলার।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা নড়াইল-এ মাশরাফির জন্ম। ছোটবেলা থেকেই তিনি বাঁধাধরা পড়াশোনার পরিবর্তে ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন, আর মাঝে মধ্যে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটা।  তারুণ্যের শুরুতে ক্রিকেটের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে, বিশেষত ব্যাটিংয়ে; যদিও এখন বোলার হিসেবেই তিনি বেশি খ্যাত, যেজন্যে তাকে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নামেও অভিহিত করা হয়।

বাইকপ্রিয় মর্তুজাকে সবাই খুব হাসিখুশি আর উদারচেতা মানুষ হিসেবেই জানে। প্রায়শই তিনি বাইক নিয়ে স্থানীয় ব্রিজের এপার-ওপার চক্কর মেরে আসেন। নিজের শহরে তিনি প্রচণ্ড রকমের জনপ্রিয়।এখানে তাকে “প্রিন্স অব হার্টস” বলা হয়। এ শহরেরই সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় সুমনা হক সুমির সাথে তার পরিচয় হয়। দু’জনে ২০০৬ সালে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। তাদের দুজন সন্তান আছে ।

তিনি ২০০৩-২০০৪ সালে দর্শনশাস্ত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়েছিলেন ।
মর্তুজা বাংলাদেশের সফলতম পেস বোলারদের একজন। আক্রমণাত্মক, গতিময় বোলিং দিয়ে অনূর্ধ-১৯ দলে থাকতেই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাবেক ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের নজর কেড়েছিলেন, যিনি কিনা তখন দলটির অস্থায়ী বোলিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন। রবার্টসের পরামর্শে মাশরাফিকে বাংলাদেশ এ-দলে নেয়া হয়।

বাংলাদেশ এ-দলের হয়ে একটিমাত্র ম্যাচ খেলেই মাশরাফি জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। ৮ নভেম্বর, ২০০১ এ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে।  একই ম্যাচে খালেদ মাহমুদেরও অভিষেক হয়। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি অমীমাংসিত থেকে যায়। মাশরাফি অবশ্য অভিষেকেই তার জাত চিনিয়ে দেন ১০৬ রানে ৪টি উইকেট নিয়ে। গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন তার প্রথম শিকার। [১২] মজার ব্যাপার হল, মাশরাফির প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচও ছিল এটি। তিনি এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী ৩১তম খেলোয়াড় এবং ১৮৯৯ সালের পর তৃতীয়। একই বছর ২৩শে নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সাথে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সাথে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে বাগিয়ে নেন ২টি উইকেট।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত তৃতীয় টেস্ট খেলার সময় তিনি হাঁটুতে আঘাত পান। এর ফলে তিনি প্রায় দু’বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে বাধ্য হন। ইংল্যন্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলায় তিনি সফলতা পান। ৬০ রানে ৪ উইকেট নেয়ার পর আবার তিনি হাঁটুতে আঘাত পান। এযাত্রায় তিনি প্রায় বছরখানেক মাঠের বাইরে থাকতে বাধ্য হন।

২০০৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার সময় রাহুল দ্রাবিড়কে অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের একটি বলে আউট করে তিনি স্বরুপে ফেরার ঘোষণা দেন। সেই সিরিজে তিনি ধারাবাহিকভাবে বোলিং করেন এবং তেন্ডুলকর ও গাঙ্গুলীকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেন। তবে ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তিনি উইকেট পাননি। এই সিরিজের একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি।

২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তিনি ভালো বল করেন। বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে তার গড় ছিল সবচেয়ে ভাল। কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নাটকীয় জয়ে তিনি অবদান রাখেন। তিনি মারকুটে ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে শূন্য রানে আউট করেন এবং দশ ওভারে মাত্র ৩৩ রান দেন।

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে ভালো পেস বোলারের ঘাটতি ছিল। বাংলাদেশে মোহাম্মদ রফিকের মত আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার থাকলেও উল্লেখযোগ্য কোন পেস বোলার ছিল না। মাশরাফি বাংলাদেশের সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন

২০০৬ ক্রিকেট পঞ্জিকাবর্ষে মাশরাফি ছিলেন একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারী। তিনি এসময় ৪৯টি উইকেট নিয়েছেন।

২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ে মর্তুজা ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ৩৮ রানে ৪ উইকেট দখল করেন। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি খেলায় নিউজিল্যান্ডের সাথে বিজয়েও মাশরাফির ভূমিকা রয়েছে।

মাশরাফি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গতির বোলার এবং সমর্থকদের কাছে “নড়াইল এক্সপ্রেস” নামে পরিচিত।

মাশরাফি একজন মারকুটে ব্যাটসম্যান। ভারতের বিপক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় তিনি পরপর চার বলে ছক্কা পেটান। সেই ওভার থেকে তিনি ২৬ রান সংগ্রহ করেন যা কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের জন্য এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ১১ বার চোটের কারণে দলের বাইরে যেতে হয়েছে মাশরাফিকে। চোটই তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল ২০১১ সালের দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ। ২০১৬ সালের রকেট বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় খেলায় ২ উইকেট সংগ্রহের মাধ্যমে মোট ২১৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারী হিসাবে তুলে ধরেন নিজেকে।

২০১৭ সালে ৬ই এপ্রিল বাংলাদেশ ব শ্রীলংকা সিরিজের শেষ টি২০ দিয়ে উনি আন্তর্জাতিক টি২০ খেলা থেকে অবসর নেন। মাঠে ম্যাশ নামে পরিচিত মাশরাফি বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার যে অধিনায়ক থাকা অবস্থায় অবসর নেয়।

মাশরাফি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কোন দেশের যে কোন খেলার জাতীয় দলের অধিনায়ক থাকাবস্থায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এবং বিজয়ী হওয়ার ঘটনা বিশ্বে এটিই প্রথম। যদিও পেশাদার খেলা চালিয়ে যাওয়া অবস্থাতেই সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার উদাহরণ বিশ্বের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নতুন নয়। ক্রিকেটারদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়সুরিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার আগেই শ্রীলঙ্কার ২০১০ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এবং ঐ নির্বাচনে বিজয়ীও হন।

২০০৯ সালের শুরুতে মাশরাফি অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের সহকারী ছিলেন। পরবর্তীতে ওই বছরেরই জুন মাসে তিনি মোহাম্মদ আশরাফুলের স্থলাভিষিক্ত হন এবং তার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পান সাকিব আল হাসান। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে নিজের প্রথম ম্যাচেই তিনি হাঁটুতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ঐ খেলায় বাংলাদেশ জয়লাভ করে কিন্তু মাশরাফি এই চোটের কারণে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠের বাইরে ছিলেন। উক্ত ম্যাচসহ পরবর্তীকালে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেন সাকিব আল হাসান। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের সাথে হোম সিরিজে তিনি পুনরায় অধিনায়কত্ব পান। তবে এ বার তিনি শুধু একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য দায়িত্ব পান এবং এবারও তার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পান সাকিব আল হাসান। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও তিনি বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সালের ৬ মার্চ সফররত জিম্বাবুয়ের সাথে তৃতীয় ওডিআই ম্যাচের পর ওডিআই দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরে যান। শেষ ওডিআইয়ে জয় নিয়ে অধিনায়কত্ব ছাড়লেও খেলা চালিয়ে যাবেন এমনটা তিনি নিশ্চিত করেন ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে। সতীর্থদের ভালবাসায় সিক্ত ৩৬ বছর বয়সী এই দল নেতা ৮৮টি ওয়ানডে খেলায় নেতৃত্ব দিয়ে ৫০টিতে জয় লাভ করে (জয়ের হার: ৫৬.৮)।

রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা
তিনি ১১ নভেম্বর, ২০১৮ আওয়ামী লীগ ব্যানারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, মাশরাফি নড়াইল-২ আসনের হয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তিনি ৩০শে ডিসেম্বর, ২০১৮ অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে ২৭৪০০০ ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জনগণের সেবা করতে গিয়ে নড়াইল এক্সপ্রেস গত ১৯ জুন ২০২০সালে করোনায় আক্রান্ত হন।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, পাঠকের আস্থাই আমাদের মূলধন

আপডেট সময় : ০৬:০৯ পিএম

১৪ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ২৯ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, শনিবার