প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর পাবে হারুন পাগলা : ইউএনও

মাকসুমুল মুকিম, দোহার -নবাবগন্জ প্রতিনিধি :

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় ১৫ বছর ধরে স্ত্রী ও কিশোরী মেয়েকে নিয়ে ইছামতি নদীপাড়ের নির্জন ঝোপে ভাঙাচোরা একটি ঝুপড়িতে বসবাস করা সহায়-সম্বলহীন হারুনের ঝুপড়ি পরিদর্শন করে খাদ্য সহায়তা করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জমিসহ ঘর তাকে উপহার দিতে ও হারুনের মেয়ের পড়ালেখার ব্যবস্থা করার আশ্বাস প্রদান করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম সালাউদ্দিন মনজু।

নবাবগঞ্জে ইছামতির নদীরপাড়ে ১৫ বছর ঝুপড়িতে বসবাস করা হারুনকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার(১২ জুলাই) দুপুরে ইছামতি নদীর তীরে ওই ঝোপে হারুনের ঝুপড়ি পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম সালাউদ্দিন মনজু। এসময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অসহায় পরিবারটিকে করা হয় খাদ্য সহায়তা।

উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আগলা ব্রিজের পূর্ব পাশের ঢালের দক্ষিণে চৌকিঘাটা তরুণ সংঘের পেছনের ঝোপে নদীর তীরের ওই ছোট্ট ঝুপড়িতে থাকেন মো. হারুন (৪৬), তার স্ত্রী আছমা খাতুন (৪৩) ও তাদের একমাত্র মেয়ে সম্পা (১২)।

পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও সালাউদ্দিন মনজু বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে হারুনের এই বসবাসের স্থানটি আমরা পরিদর্শনে এসেছি। দীর্ঘদিন ধরে সে এই ঝুপড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। এর আগে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার জন্য জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পে একটি ঘরের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু জমি না থাকায় তাকে ঘরটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জমিসহ ঘর তাকে উপহার দিতে চাই। এজন্য এই প্রকল্পের উপজেলা কমিটির মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, আমরা জানতে পেরেছি হারুন কোনো পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। সে ভিক্ষাবৃত্তি করে অতিকষ্টে তার সংসার চালাচ্ছিল। আমরা চাইবো ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে সে যে কাজটি করে স্বাচ্ছন্দবোধ করে আয় করতে পারবে আমরা তাকে সে পেশায় সম্পৃক্ত করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। এ ছাড়া কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য যদি তার পুঁজির প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রেও তাকে যথাসম্ভব সহযোগীতা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

হারুনের মেয়ের লেখাপড়ার বিষয়ে ইউএনও সালাউদ্দিন মনজু বলেন, যেখানে তাদের বসবাসের জন্য জমিসহ ঘরের ব্যবস্থা করা হবে সেখানে হারুনের মেয়ের পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হবে।

পরিদর্শনকালে ইউএনর সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন- নবাবগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অরুণ কৃষ্ণ পাল, প্রকল্প কর্মকর্তা হাসান আহমেদ, বাহ্রা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাফিল উদ্দিন মিয়া প্রমুখ।

উল্লেখ্য, হারুন উপজেলার আগলা খাঁনহাটি গ্রামের মৃত কায়েম ও ছালেহা দম্পতির ছোট ছেলে। তার মানসিক সমস্যা থাকায় আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা তাকে হারুন পাগলা নামেই চেনেন। হারুনের বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ভিটেমাটি বিক্রি করে টাকা তার বড় ভাই নিয়ে চলে গেছেন। তারপর থেকে হতদরিদ্র হারুন মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে জীবিকা নির্বাহ করেন। হারুনের নিজের জমি ও ঘর না থাকায় বাধ্য হয়ে উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের আগলা ব্রিজের পূর্ব পাশের নদীর তীরের ঝোপে একটি ঝুপড়িতে স্ত্রী আছমা আক্তার ও ১২ বছরের কিশোরি মেয়ে সম্পাকে নিয়ে বসবাস করছে। হারুনের দাবি, একটি ঘরের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ঘুরেছেন অনেকের কাছে তবুও তার ভাগ্যে জুটেনি পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে কাঙ্খিত সরকারি একটি ঘর। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জমিসহ ঘরের জন্য এলাকার মেম্বার এবং চেয়ারম্যানকে বলেও সেখানে মেলেনি কোন সুফল।