একটি অপ্রেমের কবিতা

যুবক অনার্য

ব্যালকনিতে বসে আছি।মৃদুমন্দ বৃষ্টি আর বাতাস।কী চমৎকার পরিবেশ! চারদিকে নিশ্ছিদ্র নীরবতা।সড়কে মানুষজনের নেই কোনো চলাফেরা।দেখে বোঝাই যাচ্ছে না এখন পৃথিবীতে চলছে কী ভয়ংকর দুঃসময়!

এক সময় এই ব্যালকনিতে আমি বসে থাকতাম।তুমি এস এম এস করতে: কি করছো? আমি বোলতাম: প্রেম করছি।তুমি: কার সংগে?আমি: তোমার সংগে।তুমি: কিন্তু আমি তো করছি না।বোলেই দুজন হো হো হেসে উঠতাম।

এরকমই ছিলো আমাদের সাদামাটা খুনসুটি। তুমিও জানতে- প্রেম নিয়ে কথা বলা আর প্রেম করা দুইটি আলাদা বিষয়।যারা প্রেম করে, প্রেম নিয়ে তারা কিছু বলে না, এমনকি প্রেমময় কথাও বলে না।বড়োজোর মাঝে মধ্যে দু’ চার পশলা ঝগড়া সেরে নেয়।তুমি- প্রেমিক নয়- তীর তীর ক’রে একজন বন্ধু খুঁজছিলে।আমি বোলেছিলাম: আমি তোমার খুব ভালো বন্ধু হবো।আর বন্ধু হলে বন্ধুসুলভ দুষ্টুমি তো করাই যায়।আমিও করতাম।তুমিও বুঝতে- ওটাই আমার স্টাইল।বেশ কাটছিলো বন্ধুত্বের দিনগুলি।

একদিন আমি তোমাকে I AM LEGEND ছবির কাহিনীটা বোলেছিলাম।পরিচালক- Francis Lawrence,নায়ক-Will Smith।ছবির নায়ক ভাইরাস এর ভ্যাক্সিন আবিষ্কার ক’রে কতিপয় আক্রান্তদের সহ বম্বিং ক’রে মরে যায়।তবে ভ্যাক্সিনটি একটি মেয়ের কাছে নিরাপদে রেখে যায়।

এসব কথাও তো আমাদের মধ্যে হতো।আরও হতো- কবিতার কথা।বোলতাম: তোমার কবিতার ফর্ম বাংলায় যাকে বলে আংগিক অসাধারণ কিন্তু বিষয়বস্তুর গভীরতায় বাস করছে খানিক অগভীরতা। তুমি সেই সমালোচনা মেনে নিতে,এমনকি মুল্যায়নও করতে।কী চমৎকার বন্ধুতা আমাদের!

এরকম সুন্দর দিনগুলির মধ্যে একদিন হঠাৎ তোমার নাম্বার থেকে ফোন করে একটি পুরুষকন্ঠ আমাকে ছাপার অযোগ্য যা তা শুনিয়ে দিলেন।কেউ যে এমন অকথ্য ভাষায় কথা বলতে পারেন আমি শুধু শুনেই এসেছিলাম কিন্তু সেবার প্রমান পেলাম বাস্তবেই।তবে সমস্যাটা অন্য জায়গায়।

তুমি কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারতে।পারতে বোলে দিতে: অবিনাশের স্টাইলটাই ওরকম- বড্ড রসিক।তাহলে হয়তো চমৎকার অই মানুষটির ভুল ভেঙে যেতো কিন্তু তুমি কোনো ভূমিকাই রাখো নি।যোগাযোগের সমস্ত অপশন বন্ধ করে দিয়েছিলে।যেদিন তোমাকে I AM LEGEND এর কাহিনী শুনিয়েছিলাম,তুমি চোখের জল ধরে রাখতে পারো নি।পারি নি আমিও।

আজ এই ব্যালকনিতে বসে তুমিময় এক বন্ধুহীন নিঃসংগতায় পারছিনা ধরে রাখতে দু’চোখের জল।পারলে আমিও Will Smith এর মতো বন্ধুত্বহীনতার ভ্যাক্সিন আবিষ্কার ক’রে যেতাম কিন্তু আমি তো Smith বা লিজেণ্ড নই,তাই করোনাবিদ্ধ এই করুণ পৃথিবীকে চোখের জল ছাড়া কিছুই দেবার নেই আমার।

শুধু প্রশ্ন থেকে গেলো: বোলতে পারো- আমার কী অপরাধ ছিলো!