ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়টি মরহুম ভাষা সৈনিক দাবিরুল ইসলামের নামকরণে করার দাবি

মোহাম্মদ মিলন আকতার, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :

সদ্য মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনকৃত ঠাকুরগাঁও এর বিশ্ববিদ্যালয়টি উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, ঘনিষ্ঠ সহচর, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা অন্যতম সদস্য, ভাষা সৈনিক, অ্যাডভোকেট দবিরুল ইসলাম এমএলএ (যুক্তফ্রন্ট সরকার)এর নামের আদলে হউক এমনটাই প্রত্যাশা পরিবার ও ঠাকুরগাঁও বাসির।

মরহুম দবিরুলের স্ত্রী আবেদা খাতুন ওরফে হেনা (৮৫) জানান, ৫২’র ভাষা আন্দোলনে যার ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনা পর্বে যে ক’জন সাহসী সূর্য সন্তান তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল দবিরুল ইসলাম ছিলেন সেই সাহসী ও স্বপ্ন সারথিদের অন্যতম একজন।

তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের কালিবাড়ি সাধারণ পাঠাগার চত্বরে তার একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়েছিল। যাদের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন সেদিন বেগবান হয়েছিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি(১৯৪৯-১৯৫৩) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আইন বিভাগের ছাত্র, সাবেক এমএলএ, পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি (যুক্তফ্রন্ট) ও ভাষা সৈনিক মরহুম এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ দবিরুল ইসলাম তাদেরই একজন। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আইয়ুব সরকারের নির্যাতনের শিকার হন তিনি।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সময় বর্তমান ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের বামুনিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে দিনাজপুর জেলা কারাগারে নিয়ে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। জেল থেকে বেরিয়ে ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। কিন্তু কারাগারে নির্যাতনের কারণে তার স্বাস্থ্য চরমভাবে নষ্ট হয়। যার ফলে তিনি হৃদরোগ সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে ১৯৬১ সালের ১৩ জানুয়ারিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি আবেগ প্রফুল্ল হয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, একসাথে রাজনীতি করতেন এবং একসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনবিভাগে পড়াশোনা করার সময় ছাত্র রাজনীতি করার জন্য বহিষ্কৃত হোন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে এই দবিরুল ইসলাম সম্পর্কে ৮৮, ১১০, ১১৩-১৪ ও ১২৬ পৃষ্ঠায় অনেক কিছুই লিখেছেন। মরহুম এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ দবিরুল ইসলামের স্ত্রী আবেদা খাতুন (হেনা) দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার স্বামীর অসম্ভব ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি তা নিজেই দেখেছি।

মরহুম এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ দবিরুল ইসলামের ছোট ছেলে আহসান উল্লাহ(ফিলিপ) জানান,আমার বাবাকে বঙ্গবন্ধু কতটা ভালোবাসতেন তা তিনি তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন। আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী, সহপাঠি হয়েও এখনো পর্যন্ত কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নামকরণের সাথে আমার পিতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি ।

ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান বাবলু বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় এসে বঙ্গবন্ধু নিজেই মরহুম এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ দবিরুল ইসলাম কথা বলেছেন, যে তিনি ভাষা সৈনিক ও ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি ছিলেন। ঐ দিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, উনি আমার বন্ধু মানুষ, উনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে আমার মতোই বড় নেতা হতেন। আমি ঘুরে দেখলাম কোথাও তার কোন স্মৃতিস্তম্ভ নেই। আমি নির্দেশ দিলাম ২৪ ঘন্টার মধ্যে দবিরুল ইসলামে স্মৃতিস্থম্ভ আমি দেখতে চাই। তার নির্দেশেই তখন পাবলিক ক্লাব মাঠে ছোট একটি স্মৃতিস্থম্ভ করা হয় দবিরুল ইসলামের। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক এর পক্ষ থেকে , ভাষা সৈনিক দবিরুল ইসলামের প্রতি প্রতিবছরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ মরহুম এই ভাষা সৈনিকের নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি হলে এলাকার মানুষের কাছে অমর হয়ে থাকবেন এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।