মাতাল বাবার সন্তান কোটি কোটি টাকার মালিক হলো যেভাবে

এটি একটি সত্য গল্প। প্রকাশ করার কারণ হচ্ছে, যারা বলেন অনেক পড়াশুনা করে চাকুরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন, তাদেরকে পথ দেখানোর সত্য গল্প। আশা করছি এ থেকে সবাই শিক্ষা নেবো। আর জীবনের উচুনিচু পথে সাহসের সাথে এগিয়ে যাবো।
-মনযোগ দিয়ে পড়ুন।
আমার বাবা ছিলেন একজন মাতাল, জুয়ারি। বাড়ির পাশে আমাদের ছোট্ট একটি চায়ের স্টল ছিলো। আমি আর বাবা সারাদিন চা বিক্রি করতাম। যত টাকা লাভ হতো তার অল্প কিছু টাকা বাবা সংসারে দিতো, বাকী টাকা উনি মদ খেয়ে আর জুয়া খেলে শেষ করতেন।
* আপনার বাবা আপনার লেখাপড়ার খরচ দিতো না??
— না। উনি শুধু একবার স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। তারপর থেকে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত খরচ আমার মা চালিয়েছেন। পড়ানোর জন্য অনেক কষ্ট করেছেন আমার মা। কিন্তু বাবার জন্য পারতেন না।
* ক্লাস সিক্সের পর খরচ কিভাবে চলতো??
— ক্লাস সিক্স এ উঠার পর থেকে আমি বাবার সাথে চায়ের দোকানে যেতাম। সেখান থেকে মাঝে মাঝে কিছু কিছু টাকা চুরি করতাম। আমি সব টাকা জমিয়ে রাখতাম। এভাবেই লেখাপড়ার খরচ চলে যেতো। কিন্তু সমস্যা হলো যেদিন আমার বাবা মারা গেলো।
* কিভাবে মারা গেলেন??
— মদ খেতে খেতে কিডনি দুইটা পঁচিয়ে ফেলেছিলেন। তাছাড়া আমাদের চিকিৎসা করার মত টাকা পয়সা ছিলো না। আমি তখন মেট্রিক পরিক্ষা দেবো। বয়স প্রায় ১৭ এর মত।
* তারপর কি হলো??
— বাবা মারা যাওয়ার পরে আমার চাচারা মিলে আমাদের চায়ের দোকান দখল করে নেয়। আমি একদম বেকার হয়ে যাই। টাকার অভাবে মেট্রিক পরিক্ষাটাও দিতে পারিনি। এরপর আর লেখাপড়া করার সুযোগ পাইনি।
* তারপর আপনি কি করতেন?
— আমার বাবা মারা যাওয়ার কয়েকমাস পরেই আমার মা একজন ভ্যান চালককে বিয়ে করে। অবশ্য না করেও উপায় ছিলো না, খাওয়ার মত কিছুই ছিলো না আমাদের। মায়ের বিয়ের পরে তিনি ওই লোকের সাথে থাকতেন। আমি ওই লোকটাকে পছন্দ করতাম না, উনিও আমাকে পছন্দ করতেন না। একদিন উনার সাথে ঝগড়া করেই আমি ঢাকা চলে আসি।
* ঢাকা এসে কি কাজ করতেন??
— ঢাকা আসার পর প্রথম ২-৩ দিন বলতে গেলে আমি না খেয়েই কাটিয়েছি। পকেটে টাকা ছিলো না। খিদায় পেট ব্যাথা করতো, পানি খেতাম। কিন্তু খিদে মিটতো না। খাবারের নেশায় ঘুরতাম সবসময়। একদিন খিদের যন্ত্রনায় আমি একটা গাছের নিচে বসে কাঁদছিলাম। তখন একজন লোক এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে কাঁদছি কেন, তখন আমি উনাকে সবকিছু বললে উনি আমাকে উনার গ্যারেজে নিয়ে চাকরী দেয়।
* কিসের গ্যারেজ??
— ট্রাক রিপিয়ারিং গ্যারেজ। ওরা ট্রাক এর ইঞ্জিন মেরামত করতো। উনি মিস্ত্রি ছিলেন, আমি হেল্পার হিসেবে কাজ করতাম। আমার মাসিক বেতন ছিলো ২০০ টাকা আর থাকা খাওয়া ফ্রি।
* তারপর কিভাবে কি করলেন??
— তারপর ওইখানে থেকে আমি ১ বছরে ইঞ্জিন মেরামতের প্রায় সব কাজ শিখে ফেলি। তাড়াতাড়ি শেখার কারণ হলো অল্প লেখাপড়া করেছিলাম, সব পার্টস এর নাম সহজে মনে রাখতে ও পড়তে পারতাম। তখন আমি টুকটাক কাজ করতে শুরু করেছি, তখন আমি মাসে প্রায় ১ হাজার টাকার মত পেতে লাগলাম।
* মানে আপনার বয়স যখন ১৮ তখন আপনার মাসিক ইনকাম ছিলো ১,০০০ টাকা?
— হুম। ওই গ্যারেজটাই ছিলো আমার জীবন পরিবর্তনের পথ প্রদর্শক। আমি ওইখানে থেকে অনেক ট্রাক ড্রাইভারের সাথে পরিচিত হই। ওই গ্যারেজে ৩ বছর থাকার পরে আমি নিজের একটা গ্যারেজ খুলে সেখানে কাজ করতে থাকি। আমার পরিচিত ড্রাইভার ছিলো অনেক, তাই গ্যারেজ খোলার পর থেকেই ভালো ইনকাম করতে থাকি।
* তখন মাসে কত টাকা থাকতো??
— তখন মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫-৬ হাজার টাকা থাকতো। আমি সব টাকা জমিয়ে রাখতে শুরু করলাম। আর আগেও আমার কাছে কিছু টাকা ছিলো। এইভাবে প্রায় ১ বছর টাকা জমানোর পর, আর আগের টাকা মিলিয়ে আমার কাছে প্রায় ১ লাখ টাকা হয়ে যায়। তখন আমার বয়স প্রায় ২৩ বছর।
* তার মানে ১ লক্ষ টাকা ইনকাম করতে আপনার ৬ বছর সময় লেগে গেছে। তারপর সেই টাকা দিয়ে কি করলেন?
— তারপর আমি এই টাকা দিয়ে কিস্তিতে ছোট্ট একটা ট্রাক কিনলাম। কেনার পর আমি একটা ড্রাইভার রেখে তার মাধ্যমে ট্রাক চালাতে শুরু করলাম, আর নিজে গ্যারেজে কাজ করতাম। তখন মাস শেষে আমার আর ট্রাকের ইনকাম মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা হয়ে যেতো। প্রথম ট্রাকটা কেনার প্রায় ৭-৮ মাস পরেই আমি আরো একটি ট্রাক কিস্তিতে কিনে ফেলি। তখন ২ ট্রাক মিলিয়েই মাসে ২০,০০০ টাকা পেতে শুরু করলাম। আর আমার গ্যারেজ ও ততদিনে অনেক বড় হয়,,,তখন মাসে টোটাল প্রায় ৩৫,০০০ টাকা পেতে শুরু করি।
* গ্যারেজের ব্যবসা কখন ছাড়লেন??
— প্রথম ট্রাকটা কেনার প্রায় ৫ বছর পরে। যখন আমার ৮ টি ট্রাক হয়ে যায় তখন আমার মাসিক ইনকাম ছিলো ১ লক্ষ টাকা। তখন আমি গ্যারেজ বাদ দিয়ে ট্রাকের দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করি। আস্তে আস্তে আমি ছোট্ট ট্রাক বাদ দিয়ে বড় ট্রাক কিনতে শুরু করি। এইভাবে আমার বয়স যখন ৩৫ বছর তখন আমার মোট ট্রাকের সংখ্যা হয় ১৫ টি। যার মাসিক ইনকাম ছিলো প্রায় ৫ লক্ষ টাকা।
* তো আংকেল!! এখন আপনার বয়স কত?? আর ট্রাক কয়টি?
— এখন আমার বয়স প্রায় ৪৮ বছর। আমার ট্রাকের সংখ্যা ২১৪ টি। আর বর্তমানে আমার ইনকাম প্রতি মাসে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা।
গল্পটা “একতা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি” এর মালিক মোজাম্মেল হক সাহেবের। জীবন যুদ্ধে হার না মেনে শূন্য থেকে সফল হয়েছেন।
আমরা যারা কোন কাজ শুরু করেই হতাশ হয়ে যাই, কিংবা দু দিনের মধ্যে সফলতা না আসলে ভেঙে পড়ি গল্পটা তাদের জন্য। জীবন যুদ্ধে হতাশ হয়ে গেলেই পরাজয় সুনিশ্চিত!