সৎ মায়ের নিষ্ঠুর নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্যহীন কুমিল্লার তিথি

জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, কুমিল্লা প্রতিনিধি :

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা গ্রামের বিরাম বাড়ির ইসরাত জাহান তিথি নামের এক শিশু সৎ মায়ের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ ১৪ বছর বয়সী তিথিকে সোমবার (১২ অক্টোবর) রাতে উদ্ধার করে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।

মা মারা গেছেন কয়েক বছর হলো। এদিকে বাবাও কারাবাসে। সৎ মায়ের সংসার। সৎ মায়ের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে ইসরাত জাহান তিথি নামের ১৪ বছর বয়সী এক শিশু। ইসরাত দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা গ্রামের বিরাম বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জামাল হোসেনের মেয়ে।

কয়েক বছর আগে বড়কামতা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জামাল হোসেনের স্ত্রী মারা যায়। এর পরপরই তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী পেশায় একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তার নাম লাভলী আক্তার। লাভলী দেবিদ্বার উপজেলাধীন প্রেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। লাভলী স্বামী জামাল হোসেনের গ্রামের বাড়ী না থেকে পাশের চান্দিনা উপজেলা সদরে ভাড়া বাসায় থাকেন। এখানেই তার সাথে বসবাস করে আসছিলো ভিকটিম ইসরাত জাহান তিথি।

এদিকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জামাল হোসেন অর্থাৎ তিথির বাবা একটি মামলায় পুলিশের হাতে আটক হয়ে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বাবার অনুপস্থিতিতে তিথির সৎ মা পান থেকে চুন খসতেই তিথিকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে তিথি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।

সম্প্রতি তিথির খালা-খালু চান্দিনা বেড়াতে গিয়ে তিথির খারাপ অবস্থা দেখতে পান। তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে গত ২ অক্টোবর তাকে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলাধীন কুমিল্লা সেনানিবাসের সিএমএইচ সংলগ্ন ঘোষনগর উদয়নবাগ এলাকায় তার খালুর বাসায় নিয়ে আসা হয়। এদিকে ইসরাত জাহান তিথির খালাতো ভাই নাছিমুল হাসান ভুইয়া বলেন, তিথিকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা জানতাম না। আমরা তিথিকে আমাদের বাসায় আনার পর আমরা বিষয়টা জানতে পাই।

গতকাল ১২ অক্টোবর তিথির খালাতো বোন তাকে গোসল করাতে গেলে তার পিঠে এবং দেহের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। তখন কেউ একজন এই ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করলে তা এই প্রতিবেদকের নজরে আসে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আজিম-উল-আহসানকে মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে জানানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নির্দেশ দেন। পরে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বুড়িচং থানার দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আজিজুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত জেনে ভিকটিম ইসরাত জাহানদের বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী তাকে চান্দিনা থানায় নিয়ে যান। ইন্সপেক্টর আজিজুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় চান্দিনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় এবং তিথিকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।


পরবর্তীতে রাতেই তিথির সৎ মা-কে গ্রেপ্তার করতে তাদের চান্দিনার বাসায় হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিথির সৎ মা লাভলী আক্তার পালিয়ে যায়। এই অমানবিক ঘটনার সাথে জড়িত শিক্ষক লাভলীকে দ্রুত আইনের আওতার এনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সবাই।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, পাঠকের আস্থাই আমাদের মূলধন

১৩ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. ২৮ আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ২৫ সফর ১৪৪২ হিজরি, মঙ্গলবার