জামায়াতের মদদে অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

নিউজ ডেস্ক :  কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ যুদ্ধাপরাধী সংগঠন এবং বাংলাদেশ বিরোধী গোষ্ঠী জামায়াতে ইসলামীর ইন্ধনে খুন, অপহরণ, ধর্ষ’ণ, অস্ত্র ও মাদক পাচার, ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা নিজেদের মত করে ভাগ করে নিয়েছে ৩১টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিয়ন্ত্রণ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরণের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের উস্কানিও দেয়া হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

গত ৪ বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের অপরাধে ১ হাজার ২৯৮টি মামলা হয়েছে। এতে আসামি হয়েছে ২ হাজার ৮৫০ রোহিঙ্গা। ক্যাম্পগুলোর ভেতরে ১৫ থেকে ২০টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে জামায়াতের অর্থায়নে। তাদের নিয়ন্ত্রণে চলছে মাদক ব্যবসাসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড।

আরো পড়ুন : শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

অভিযোগ উঠেছে, এখানে প্রতিদিন প্রায় শতকোটি টাকার ইয়াবার লেনদেন হয়। শুধু তাই নয়, দেশের সব ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এসব ক্যাম্প থেকেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর ক্যাম্পকেন্দ্রিক অপরাধ নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

আরো পড়ুন : যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও কর্মীদের দাবি, অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরেই অন্তত ১৫ থেকে ২০টি সক্রিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে। এর বাইরে ক্যাম্পকেন্দ্রিক রয়েছে আরও একাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রত্যেক বাহিনীতে ৩০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছে।

সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পগুলো হয়ে ওঠে অপরাধের অভয়ারণ্য। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি ও খুনাখুনিতে জড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পগুলোতে দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকলেও রাতে তা অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন : মেহ প্রমেহ ও প্রস্রাবে ক্ষয় রোগের কার্যকরী সমাধানসমূহ

কুতুপালং এলাকার ইউপি সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশের সব ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে। রোহিঙ্গারা সহজে সীমান্ত পার হয়ে মিয়ানমারে যাওয়া-আসা করতে পারছে। এ কারণে ইয়াবা ও স্বর্ণ চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ক্যাম্পকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে অনেক সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। এতে করে খুনাখুনি ও অপরাধের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদ্য কারামুক্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক কয়েকজন শীর্ষ মাদক কারবারি বলেন, ক্যাম্পে প্রতিদিন শতকোটি টাকার বেশি ইয়াবার লেনদেন হয়ে থাকে। অন্তত ৩০ থেকে ৪০ লাখ পিস ইয়াবা প্রতিদিন হাতবদল হচ্ছে। তারা আরও বলেন, মূলত ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে অন্তত অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে।

আরো পড়ুন : গেজ, অশ্ব,পাইলসের সহজ চিকিৎসা

উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক কারবার, স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে ১২ থেকে ১৪টি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে বলে শুনতে পেয়েছি। তাদের দ্রুত নিশ্চিহ্ন করতে না পারলে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের পরিণতিও ভয়াবহ হতে পারে।

ক্যাম্পে অধিক পরিচিত সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে রয়েছে মাস্টার মুন্না গ্রুপ, মৌলভী ইউসুফ গ্রুপ, রকি বাহিনী, শুক্কুর বাহিনী, আব্দুল হাকিম বাহিনী, সাদ্দাম গ্রুপ, জাকির বাহিনী, নবী হোসেন বাহিনী, পুতিয়া গ্রুপ, সালমান শাহ গ্রুপ, গিয়াস বাহিনী, শাহ আজম গ্রুপ ইত্যাদি।

ক্যাম্পের একাধিক বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব গ্রুপের কিছু সদস্যের নামও পাওয়া গেছে। তারা হলো- মো. আব্দুল্লাহ ওরফে দাদা ভাই, বুলু, সুলতান, নবী হোসেন, সফিক, রফিক, মুর্তজা, হামিদুল্লাহ, আবদুস শুকুর, শরীফ হোসেন, মো. রহমান, সবেদ উল্লাহ, আব্দুল্লাহ, ফয়সাল, মো. সোলাম, হামিদ হোসেন, মুহিবুর রহমান, দিলদার, আবু সাইদ, তাহের, ফারুক, মুক্কুস, জুবায়ের, মুস্তফা, আব্দুল্লাহ আইদি, হাসন শরীফ, আব্দুল জলিল, হাফেজ উল্লাহ, আরমান খান, আইয়ুব, আমির হোসেন, নুর ইসলাম, আলী আকবর, কামাল, জাইবু রহমান, নাজিমুদ্দিন, সোনা উল্লাহ ও আরাফাত।

অভিযোগ আছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিক্তিক বেশিরভাগ সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদের যোগাযোগ রয়েছে। ক্যাম্প অশান্ত করার জন্য সন্ত্রাসী গ্রুপকে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা ফ্রিতে দিচ্ছে মিয়ানমার সরকার।

মূলত বিশ্বের দরবারে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে তুলে ধরা, আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়াকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করতে চায় মিয়ানমার।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্যমতে, চার বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের অপরাধে ১ হাজার ২৯৮টি মামলা হয়েছে। এতে আসামি হয়েছে ২ হাজার ৮৫০ রোহিঙ্গা। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে হত্যা, ধর্ষ’ণ, অপহরণ, ডাকাতি, অস্ত্র ও মাদক পাচার, মানব পাচার, পুলিশের ওপর হামলা ইত্যাদি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭০টি খুনের মামলা হয়েছে ৪ বছরে। এ সময় ৭৬২টি মাদক, ২৮টি মানব পাচার, ৮৭টি অস্ত্র, ৬৫টি ধর্ষ’ণ ও ১০টি ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে। ৩৪টি মামলা হয়েছে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অপরাধে। অন্যান্য অপরাধে হয়েছে ৮৯টি মামলা।

গেল ৪৮ মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘর্ষের ঘটনায় ২২৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৩৫৪ জন। ২০১৮ সালে ২০৮ মামলায় আসামি ৪১৪ জন। ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬৩টি। যার আসামি ৬৪৯ জন। ২০২০ সালে ১৮৪ মামলায় হয়েছে, ৪৪৯ আসামি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-১৪-এর পুলিশ সুপার নাঈমুল হক বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী থাকতে পারে। তবে চরমপন্থি কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব না থাকলেও জামায়াতের সরব উপস্থিতি আমাদেরও চোখ এড়ায় না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এপিবিএনের পাশাপাশি অন্য আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্য কাজ করছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন শতকোটি টাকার বেশি ইয়াবার লেনদেন বা ৩০ থেকে ৪০ লাখ পিস ইয়াবার হাতবদল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ধরনের কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই।

র‌্যাব-১৫-এর উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে র‌্যাব অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক অনেক বড় বড় সন্ত্রাসী র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। বাংলানিউজব্যাংক।

আরো পড়ুন : অ্যালার্জি দূর করবে ৫টি খাবার