দেয়ালচাপায় নির্মাণ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু : দায়ভার কার?

সম্পাদকীয়

ক্ষুধা মেটাতে দরিদ্র মানুষরা কাজের সন্ধানে ছুটে চলে দূরদূরান্তে! উদ্দেশ্য দু’বেলা দু’মুঠো খাবার পরিবারের সদস্যদের মুখে তুলে দিতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা। এটা দরিদ্র মানুষগুলোর সাধারণ বিষয়। তবে একেবারে দরিদ্র মানুষরা এর শিকার বেশি হয়ে থাকে। নিজ এলাকায় তখন কোনো কাজই থাকে না। সেজন্যে তাদেরকে ছুটে যেতে হয় নিজের এলাকা ছেড়ে দূরে কোথাও। এমনকি নিজের জেলা ছেড়ে দূরে কোথাও। তখন দূরের মানুষের চাহিদা মতো তাদেরকে কাজ করে দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে হয়।

আমরা জানি, উত্তরবঙ্গের অর্থাৎ রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, ভোলা ও লালমনিরহাটসহ আরও অনেক জেলার হাজার হাজার মানুষ কাজের সন্ধানে কুমিল্লাসহ চাঁদপুরের মতো এলাকায় এসে কাজের সুবিধার্থে বাস করছেন। এদের অনেকেই রিকশাচালক। আবার কেউ কেউ নির্মাণ শ্রমিক!

এসব শ্রমিকদের জিজ্ঞাসা করলে জানা যায়, তারা তাদের নিজের এলাকায় তেমন কোনো কাজ পায় না। যদি তারা নিজের এলাকা কাজ পেতো তাহলে এখানে ছুটে আসতো না। তাদের বাঁচার নিশ্চয়তা ওখানে তেমন নেই বলেই তারা এখানে আসে। তাছাড়া ভোলায় কাজের আর্থিক মূল্য খুবই কম বলে অনুমান করা যায়। আর অপরদিকে কুমিল্লাসহ চাঁদপুরের মতো জায়গায় কাজ অনুযায়ী টাকা পাওয়া যায় বেশি। তাই টাকার মায়ায় ঘর-সংসার ভুলে এখানে পড়ে থাকে।

অনেক সময় দেখা যায়, এসব জেলার অনেক শ্রমিক ওরা ঝাঁক বেঁধে ছড়িয়ে পড়েন এসব জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও। সবাই শহরে কাজ করতে পারে না। অবশ্য যারা একটু সহজসরল প্রকৃতির, তারা কাজ খোঁজ করেন গ্রামে। কাজ শেষ হয়ে গেলেও স্থায়ীভাবে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুব কম। কেননা বাড়িতে তাদের করার মতো তেমন কাজ নেই। তাই বাড়িতে ওরা মাঝে মাঝেই যান। অনেক সময় দেখা যায়, এসব শ্রমিকরা ঈদেও বাড়িতে যান না কেউ কেউ। কামাইটামাই শেষ করে তবেই যান বাড়িতে। কেউ আবার এ অঞ্চলে বিয়েসাদী করে রীতিমত জামাই হয়ে বসবাস করার মতো লোকেরও অভাব নেই। তারপরও বাড়িতে তারা যান। তবে বলা চলে, নিজের বাড়িতে তারা শুধু বেড়াতেই এখন যান। এটাই এখন তাদের জীবনের নির্মম বাস্তবতা। তবে সবই পেটের তাগিদে করে থাকেন।

অবশ্য এতো কিছু বিসর্জন দিলেও তারা অন্তত খুশি থাকেন যে, পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছেন। এটাই তাদের জন্যে বড় কথা!

প্রিয় সময়ে প্রকাশিত ‘চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে দেয়াল চাপা পড়ে ভোলার নির্মাণ শ্রমিকের করুণ মৃত্যু’ শিরোনামে সংবাদটি পাঠক হিসেবে আমাদের অনেককে কাঁদিয়েছে। এটা অত্যন্ত কষ্টকর ও দুঃখজনক। হয়তো এই শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা তার উপর নির্ভরশীল। যদি আয় করে বাড়িতে টাকা পাঠায় তাহলেই শুধু সেই পরিবারটি বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু এখন যদি তার লাশটি বাড়িতে পোঁছায় এটা ঐ পরিবারের জন্যে কতটা দুঃখজনক হবে! আমরা সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মাথার উপর থেকে দেয়াল চাপা পড়ে এক নির্মাণ শ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়েছে, যার নাম মো. আবুল কাশেম (৪৫)। গত শনিবার শেষ বিকালের দিকে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৭ নম্বর ওয়ার্ড টোরাগড় গ্রামে (হামিদিয়া জুট মিল) এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা জেনেছি, নিহত নির্মাণ শ্রমিক ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার রসূলপুর চৌমুহনী গ্রামের রাড়ী বাড়ির কালু বারির ছেলে। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ থানা হেফজাতে নেয়।

আমরা মনে করি, নির্মাণ শ্রমিকদের আরো সতর্ক থাকা উচিত। তাছাড়া জুট মিলের মতো জায়গায় কাজ করাটা অনেকটা শক্ত কাজ বা কঠিন কাজ। এসব ক্ষেত্রে মালিকদেরও নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে আরো জোরালোভাবে চিন্তা করা উচিত। পুরাতন গোডাউন ভাঙ্গার কাজের বিষয়ে শ্রমিকদের সতর্ক করা উচিত। যদিও আমরা এটাকে দুর্ঘটনা বলে মনে করতে পারি, কিন্তু অন্তত একটি অসহায় পরিবারের কথা চিন্তা করে হলেও জুট মিলের মালিকপক্ষকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উচিত।