সীতাকুণ্ডের আগুন বাংলাদেশকে নতুন শিক্ষা দিয়ে গেলো

সম্পাদকীয়
বর্তমানে সারাদেশে আলোচিত একটি বিষয়-সীতাকুণ্ডের আগুন। আমরা জানি, আগুনকে বলা হয় সর্বভূক। কারণ অগ্নিকাণ্ডে ছাই হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। তিল তিল করে গড়ে তোলা মূল্যবান জিনিসপত্র। শুধু তাই নয়, ঘটে প্রাণহানী। যার জলজ্ব্যান্ত প্রমাণ সীতাকুণ্ডে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা বলা বাহুল্য, তার চেয়েও বেশি মর্মাহত করেছে স্বজনহারাদের আর্তনাদ। এ আগুন এখন শুধুমাত্র সীতাকুণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই-এই আগুনের আলোচনা চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে। কেননা আগুনের লেলিহান শিখা চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে মুহূর্তেই; আর সাথে সাথে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হওয়াসহ মানুষ মারা গেছে।

আমরা দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি, মিডিয়ার মাধ্যমে আগুনের লেলিহান শিখা সরাসরি দেখতে পেয়েছি। ঐদিন সীতাকুণ্ডের মানুষসহ সারাদেশের মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতি লক্ষ্য করেছিলো। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগু লাগে।

বিস্ফোরণ ও আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিলো। শুরুতে বিস্ফোরনের বিকট শব্দ। তারপর আগুন! আর কিছুক্ষণ পরপর বিস্ফোরণের শব্দ পরিস্কার শোনা যাচ্ছিলো। রাসায়নিকের কন্টেইনারে একের পর এক বিকট বিস্ফোরণ ঘটতে থাকলে বহু দূর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো যে, সেই সীতাকুণ্ডের আগুনে নয় কর্মীকে হারালো ফায়ার সার্ভিস। এর আগে কখনও আগুন নেভাতে গিয়ে এত কর্মীকে হারাতে হয়নি বাংলাদেশের অগ্নি নির্বাপক বাহিনীকে। সেদিন বাংলাদেশের মানুষ কেঁদেছিলো। গত ৪১ বছরে যেখানে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর এক অগ্নিকাণ্ডেই প্রাণ গেল নয়জনের। সেদিন সর্বমোট ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাছাড়া কয়েকজন নিখোঁজও রয়েছেন বলে জানা গেছে।

ঋয়াবহ এই আগুন নেভাতে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সবগুলো ইউনিট চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় রাতে সাড়ে ৩টার দিকে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে অগ্নি নির্বাপক গাড়ি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়।

আমরা জেনেছি যে, ঘটনার পরপর এসব এলাকার বাসিন্দাদের অধিকাংশ শিশু ও নারী সদস্যকে নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজনের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিস্ফোরণে অনেকের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেঙে যায় জানালার কাচ। ফুঁটো হয়ে যায় টিনের চাল। দেওয়ালে দেখা দেয় ফাটল। নষ্ট হয়ে যায় বাসার এসি-ফ্রিজ।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বর্তমানে অগ্নিকান্ডের দুঃসংবাদটি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রতি বছর মানুষের কিছু ভুলের জন্য পুড়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। অসংখ্য মানুষ তাদের প্রাণ হারাচ্ছে। দুঃখজনক এই ‍অবস্থা থেকে নিরাপদে থাকতে প্রয়োজন সচেতনতা।

সত্যিই, সীতাকুণ্ডের আগুন বাংলাদেশকে নতুন শিক্ষা দিয়ে গেলো। দিয়ে গেলো-আমাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে। বড় কোনো প্রতিষ্ঠানকে আরো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অগ্নিনির্বাপক কর্মী রাখতে হবে। রাখতে হবে আরো জনবল। সরকারসহ সারাদেশের মানুষকে আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা আর ক্ষতি চাই না, আমরা আর সম্পদ হারাতে চাই না।