পবিত্র হারামাইন-শরীফাইনের ফযিলত

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার। আর এজন্যই আমরা তার প্রশংসা করি। তার নিকট সহায্য, ক্ষমা, প্রার্থনা এবং সর্বদা তারই উপর ভরসা রাখি। আমরা মহান প্রভুর নিকট আশ্রয় কামনা করছি।আমাদের নফসের অন্যায় আচরণ এবং খারাপ আমলের অনিষ্ট হতে।

অতঃপর হে বন্ধুগণ!মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারার জিয়ারতের বরকত দ্বারা আপনাদেরকে সম্মানিত করুন।বরকতময় স্থানদ্বয়ে পৌঁছার জন্য মহান আল্লাহর নিকট উসিলা তালাশ করুন,একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করুন।

আল্লাহর রহমত হতে নৈরাশ হয়েছে এমন লোকদের দলভুক্ত হবেন না,কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-
যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে,আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো।নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন। (সূরা আনকাবুত-৬৯)।

জেনে রাখুন,মহান আল্লাহ এই দুই শহরকে বরকতময় করেছেন সৃষ্টিকুলের সর্দার আল্লাহর প্রিয় বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও পবিত্র কাবা ঘরের কারণে।এই দুটি শহরের মর্যাদায় বহু আয়াত ও হাদিস বিদ্যমান।

মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ-নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর কাবা,যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে,সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।এতে রয়েছে মাকামে ইব্রাহিমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন।আর যে লোক এর ভিতরে প্রবেশ করছে সে নিরাপত্তা লাভ করছে। (সূরা আল ইমরান-৯৬)।

আর যে কেউ মদিনার সম্মান নষ্ট করবে সে অভিশপ্ত! যেমনিভাবে হযরত আলী (রাঃ)-বলেনঃ- কুরআন এবং সহিফায় যা আছে তা ব্যতীত আমি রাসূল (সাঃ)হতে আর কিছু লিখে রাখেনি।

তিনি বলেন এতে আছে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ- মদিনা হারাম সম্মানিত আইর হতে সাওর পর্যন্ত।

যে তাতে কোন অসৎ প্রথা বিদআত সৃষ্টি করবে অথবা অসৎ প্রথা সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের অভিশাপ! তার ফরজ বা নফল কোনটাই কবুল করা হবে না। সকল মুসলমানের প্রতিশ্রুতি এক তাদের ক্ষুদ্র ব্যক্তিও প্রচেষ্টা করতে পারে।

যে কোন মুসলমানের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তার উপর আল্লাহ ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের অভিশাপ তার ফরজ বা নফল কোনটাই কবুল করা হবে না। (বুখারী-মুসলিম)।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-হতে বর্ণিত,একদা রাসূল (সাঃ)-মক্কার প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃকি উত্তম শহর তুমি!তোমাকে আমি কত ভালবাসি।যদি আমার কওম আমাকে তোমার থেকে বিতাড়িত না করতো,তবে আমি কখনোই তোমায় ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করতাম না।
(তিরমিজি)।

হযরত আনাস (রাঃ)-হতে বর্ণিত,রাসূল (সাঃ)-কোন সফর হতে আগমনকালে মদিনার প্রাচীর সমূহ দৃষ্টিগোচর হলে আপন সাওয়ারীর উটকে তাড়া করতেন,আর যদি তিনি কোনো ঘোড়া বা খচ্চরের পিঠে থাকতেন উহাকে নাড়া দিতেন মদিনার মহব্বতের কারণে।
(বুখারী)।

হযরত আইয়াশ ইবনে আবু রাবিয়া মাখযুমি (রাঃ)-হতে বর্ণিতঃ-রাসূল (সাঃ)-ইরশাদ করেছেনঃ-আমার উম্মত কল্যাণের সাথে থাকবে ততক্ষণ,যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা মক্কার সম্মান পূর্ণভাবে বজায় রাখবে,যখন তারা এটা বিনষ্ট করবে ধ্বংস হয়ে যাবে।
(ইবনে মাজাহ)।

হে বন্ধুগণ মদিনায় মৃত্যু কামনা করুন!কেননা যে ব্যক্তির মৃত্যু মদিনায় হবে সে প্রিয় নবীর শাফায়াত লাভ করবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-হতে বর্ণিতঃ রাসূল (সাঃ)-বলেনঃ-যে কেউ মদিনায় মরতে পারে সে যেন তাতে মৃত্যুবরণ করে।কেননা,যে মদিনায় মৃত্যুবরণ করবে আমি তার জন্য সুপারিশ করবো।
(আহমদ)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-হতে বর্ণিতঃরাসূল (সাঃ)-ইরশাদ করেছেনঃ-মদিনার দরজাসমূহে ফেরেশতাগণ পাহারায় রয়েছেন,সুতরাং প্রবেশ করতে পারবে না মহামারী ও দাজ্জাল।অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে হে আল্লাহ!মক্কায় তুমি যা বরকত দান করেছো,মদিনাতে উহার দ্বিগুণ বরকত দান করো। (বুখারী-মুসলিম)।

হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-হতে বর্ণিত,রাসূল (সাঃ)-ইরশাদ করেছেনঃ-যে কেউ কেবল আমার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে এসে আমার জেয়ারত করবে,কিয়ামতের দিন সে আমার পাশে থাকবে আর যে ব্যক্তি মদিনাতে বসবাসের এখতিয়ার করবে এবং তার কষ্টে ধৈর্য্য ধারণ করবে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সাক্ষী ও সুপারিশকারী হবো।আর যে দুই হেরেম শরীফের কোন একটিতে মৃত্যুবরণ করবে,কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে বিপদমুক্তদের দলভুক্ত করে উঠাবেন।
(বায়হাকী)।

পরিশেষে মহান আল্লাহর নিকট ইচ্ছা পোষণ করছি যে, হে আল্লাহ!হারামাইন-শরীফাইনকে আমাদের জন্য আশ্রয়স্থল ও আবাসস্থল করে দিন।এবং হারমাইনে মৃত্যুবরণ করার তৌফিক আপনি আমাদেরকে দান করুন, যাতে আমরা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর শাফায়াত লাভে সফল হতে পারি। আল্লাহুম্মা আমিন।

মো. রফিকুল ইসলাম রানা, শিক্ষার্থী : ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।