একজন মজিদের পরিবার

০৮ আগস্ট ২০২০ খ্রিস্টাব্দ
২৪ শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
১৭ জ্বিলহজ্ব ১৪৪১ হিজরি

প্রকাশিত : শনিবার

সম্পাদকীয়…

আপন মানুষ যখন দুঃখ দেয়, দীর্ঘদিন সেই দুঃখ বয়ে বেড়াতে হয়। আপন মানুষ বলে কথা-তাই গোপন রাখতে হয়, যেন অশান্তি সৃষ্টি না হয়। কিন্তু কখনো কখনো আপন মানুষও নির্মম হতে পারে। তখন ইচ্ছে জাগে, দূরে কোথাও সেই আপন মানুষ ছেড়ে চলে যেতে। কারো কারো মতে, হয়তো সেটা অনেক ভালো। তা’ না হলে মনের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। তখন হিতে বিপরীত হয়ে অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা ঘটেও যেতে পারে। এসব কথা হলো যুক্তি নির্ভর কথা ও চিন্তার প্রতিদান। কখনো কখনো আমরা ঠিক সে রকম করি না, যে রকম আমরা চিন্তা করি।

প্রিয় সময়ে ‘হাজীগঞ্জে বৃষ্টি এলেই ঘরের কোণে আশ্রয় নেয় মজিদের পরিবার!’ প্রকাশিত সংবাদটি পাঠকমাত্রই পড়লেই একটি পরিবারের দুঃখের বিষয় উপলব্ধি করতে পারবেন।

ঐ পরিবারটির কেনো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, সেটাও চিন্তার বিষয় বটে। আর তখন চিন্তা করে আমরা অনেক প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে পেতে পারি। আমরা অনুমান করতে পারি যে, ঐ পরিবারটি জীবনে এমন কোনো সুযোগ পায়নি; যে সুযোগের জন্যে তার পরিবারে অনেক টাকা উপার্জন হবে, আর সেই উপার্জিত টাকায় তারা আরো ভালো একটি ঘর তৈরি করে থাকতে পারে। অথবা, তাদের সে রকম পুঁজিও ছিলো না যে, সেই পুঁজি খাটিয়ে তারা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে!

বর্তমানে আমাদের সমাজে এমন অনেক অভাবী পরিবার রয়েছে, যা’ আমরা স্বচক্ষে দেখছি যে, তাদের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ অবস্থা। তাদের দুর্দিন অতিবাহিত অতি কষ্টে কষ্টে। তাদের দেখার কেউ নেই যেন; এমনকি আত্মীয়রাও কখনো কখনো ঠকিয়ে থাকে। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে নৈতিক শিক্ষার প্রতিফলন ছাড়া গত্যন্তর নেই। কিন্তু সেই অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আগেই সর্বনাশ হয়ে যায়।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, দিনমজুর আব্দুল মজিদ নিজেই বলেছেন ‘গত প্রায় ৬ বছর পূর্বে আমার ঘরের পাশে বড় ভাই জাহাঙ্গীর বেপারীর কাছ থেকে ১ শতাংশ জায়গা সাব কবলা দলিল মূল্যে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি। কিন্তু আপন বড় ভাই জায়গা দখল বুঝিয়ে না দিয়ে তালবাহানা শুরু করে আসছে। এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহ পায়নি। বর্তমানে বর্ষার এ সময়ে বৃষ্টি হলেই স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘরের এক কোনে কিংবা অন্যের ঘরে আশ্রয় নিতে হয়। এ বিষয়ে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক সহযোগিতা চাই।’

আমরা জেনেছি যে, দিনমজুর আব্দুল মজিদের ঘরে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও ছোট দুই পুত্র সন্তান নিয়ে ৭ জন সদস্য। অত্যন্ত দরিদ্র একটি পরিবার। কোনো রকমে চলছে এই দরিদ্র পরিবারটি, টানাটানির সংসার। অভাব আছে বলেই ভাঙ্গা ঘরটি মেরামত করতে পারছে না। আর তাই পুরানো ভাঙ্গা ঘরেই তাদের বসবাস করতে হচ্ছে। সেই জসীম উদ্দিনের আসমানীর ছোট্ট ঘরটির মতোই যেন, যখনই বৃষ্টি শুরু হয়, ঠিক তখনই পরিবারের সকল সদস্য আশ্রয় নেয় ঘরের এক কোণে। এতে বোঝা যায়, গড়গড়িয়ে বৃষ্টির পানি ঘরেও পড়ে এবং ভিজে যায়। এমনই মানবিক জীবন যাপন করছে হতদরিদ্র এই পরিবারটি। বলা চলে, খোলা আকাশের নিচে পরিবারটি মানবেতর জীবনযাপন করছে। হতে পারে, ঐ পরিবারের আত্মীয় প্রতিবেশীরাও ধনী রয়েছে, কিন্তু তারা হয়তো জানেই না তাদের একটি পরিবার নিদারুণ কষ্টে অতিবাহিত করছে একটি পরিবার। এভাবে গ্রামবাংলার অনেক পরিবারই আমরা একটু চেতনা দেখিয়ে দেখলেই দেখতে পাবো।

এটা সত্য যে, আধুনিককালেও এমন নির্মম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিনগুলো অতিবাহিত করছে তা’ আমরা মজিদের পরিবারের দিকে তাকালেই বুঝতে পারছি।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে মজিদের পরিবারে একটা দুঃখের বিষয় আমরা দেখতে পাই, তা হলো তার নিজের জায়গা দখল না পাওয়া। অতএব, যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সন্তোষজনক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করতেই পারি।