প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ দরকার

সম্পাদকীয়

প্রতিটি মানুষেরই সুন্দর একটি মন রয়েছে, রয়েছে অনুভূতি। হাসি, আনন্দ, দুঃখ পাওয়ার অনুভূতি রয়েছে সবশ্রেণীর মানুষের মধ্যেই। তবুও আমাদের কিছু কিছু মানুষের মনে বিভেদ কাজ করে গুরুত্বের দিক থেকে। অনেক সময় মানুষ প্রতিবন্ধীদের মোটেও গুরুত্ব দিতে চায় না। তাদের প্রতি নিষ্ঠুরভাবে অবহেলা করা হয়। যা’ খুবই অমানবিকই বটে। সেই সাথে তাদের কথা তো শোনার মতো সময়ই কারো কারো হয় না। অথচ, তারাও মানুষ, তাদেরও সুন্দর মন রয়েছে। তারাও সমাজেরই একটি অংশ।

প্রতিবন্ধীরা মোটেও বোঝা নয়, তাদেরকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা যায় ইচ্ছা করলে। এমনও প্রতিবন্ধী রয়েছে, যারা একজন সুস্থ মানুষের চেয়েও সমাজের জন্যে বড় অবদান রেখে চলেছে; এমন উদাহরণের অভাব নেই। শুধু তাদেরকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব সমাজকেই নিতে হবে।

প্রিয় সময়ে ‘প্রতিবন্ধীর কথা শুনলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস, দিলেন সমাধান’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম একজন প্রতিবন্ধীর দুঃখের কথা। সেই প্রতিবন্ধীর কথা প্রকাশ করতে পেরে এবং তার কথাগুলো মনোযোগসহকারে শোনায় খুবই আত্মতৃপ্তি পেয়েছিলেন। কেননা এর আগে তার কথা কেউ এভাবে শুনেনি।

আমরা মনে করি প্রতিবন্ধীদের কথা শুনতে হলে সুন্দর একটি মন লাগে। তাহলে প্রতিবন্ধীরাও খুবই খুশি হবেন। যদি তাদেরকে অবহেলা করা হয় তাহলে তারা খুবই কষ্ট পান।

আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধ রয়েছে। সত্যি বলতে, সেসব প্রতিবন্ধীরা পারিবারিকভাবেও অবহেলা ও অযতেœর শিকার। তারা পরিবারে ভালো পরিচর্যা পায় না। তাদের দিকে খুব একটা নজর দেয়া হয় না। ফলে মানসিকভাবে তারা বেড়ে উঠতে পারে না। একটু চিন্তা করলেই তাদেরকে দিয়েও ভালো কিছু করা যেতে পারে। তারাও পরিবারের জন্যে আয়মূলক কাজ ও সমাজের জন্যে ভালো কাজ করতে পারে।

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় সদ্যযোগদানকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস পাংশায় যোগদানের পর তার কার্যালয়ে একদিন প্রতিবন্ধী আজিজুল ইসলাম আসেন। উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা এই প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি স্ত্রী পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন মাছপাড়া রেলওয়ের পাশে সরকারী জমিতে। অফিসে এসে তিনি তার মনের কথা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলতে পেরেছিলেন। এভাবে তার মনের কথা বলতে পারার সুযোগ আগে কোনোদিনই পাননি; আর তার কথাও কেউ শুনেনি। তার কথা প্রকাশ করার পর তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়েগিয়েছিলেন এবং তার সমস্যা সমাধানের পথও তিনি পেয়েছিলেন।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার’র কার্যালয়টি সকলের জন্য, সমস্যা সম্ভাবনার কথাগুলো তো আমাকেই বলবে, তাই আমার কার্যালয় সকলের জন্য উন্মুক্ত।’ সত্যিই প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এভাবেই হতো তাহলে অবশ্যই দেশে সুখের জোয়ার বইয়ে যেতো। আমরা এমন কথা ও বাস্তবতাকে অভিবাদন জানাই।

এটা সন্তোষজনক বিষয় যে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে একজন প্রতিবন্ধী বয়স্ক লোক প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। অফিসার তার অফিসে আসার কারণ জানতে চাইলেন ও প্রতিবন্ধী বয়স্ক লোকটির সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। শুধু তাই নয়, একই সাথে প্রতিবন্ধীর সমস্য সমাধানের পথও দেখিয়েছিলেন। সত্যিই, এভাবে একজন প্রতিবন্ধীকে গুরুত্ব দেয়ায় আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, ‘প্রতিবন্ধী বয়স্ক লোক বের হয়ে বলেন, আগেও আমি এখানে বেশ কয়েকবার এসেছি কিন্তু সে সময় এমন ভালো করে আমার সাথে কথাও বলেনি- সমস্য সমাধান তো দুরের কথা; এই স্যার অনেক ভাল, আমার মত প্রতিবন্ধীর সাথে সময় নিয়ে কথা বলায় আমি তার জন্য দোয়া করি।’

আমরা বলতে চাই যে, সেবা প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সুন্দর মনোভাব এমনই হওয়া উচিত। তাহলে সাধারণ মানুষ তাদের চাহিদা বলার সুযোগ পাবে। সুযোগ পাবে তাদের সমস্যাগুলো বলার জন্যে। আর সমাধানের পথ পেয়ে জীবনে বাঁচার সুন্দর উপায় খুঁজে পাবে। আমরা এমনই দায়িত্ববান সরকারি কর্মকর্তা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই চাই। যেন সেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মতো সকলেই দোয়ার হাত উঁচু করে সরকারি অফিস থেকে বের হতে পারে। সেই সাথে আমরা বলবো, সমাজের সর্বস্তরের মানুষজন যেন প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে।