সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন এবং সাহসী সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ

সাংবাদিকের আছে কলম, আর ওদের আছে অবৈধ অস্ত্র

বার্তাকক্ষ :

সাগর-রুনি হত্যা হয়েছে। বিচার ঝুলে আছে দীর্ঘদিন ধরে। চট্টগ্রামের সাংবাদিক মোস্তফা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তার পাশে মানবতা দাঁড়ায়নি তেমন একটা। সবই ফাঁকা বুলি আওড়ায়। ফলে সমাজে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে, সাহস পাচ্ছে আরেকটা অপরাধের। এ ধরনের নিয়মের মূলে কুঠারাঘাত করার সময় এসেছে। না হলে সমাজে অন্যায় বাড়বে, ন্যায় ও মানবতা হবে ভুলুণ্ঠিত।

বাংলাদেশের অন্যতম অপরাধনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এখন সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন এবং সাহসী সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে চোরাচালানি, কিশোর অপরাধীরা ভয়াবহ বর্বরতারই প্রমাণ দিচ্ছে। এই চোরাচালানি ও কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরওয়ারকে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে।

ওরা তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের কথোকপথন অনুযায়ী তাদের ‘বস’ বলেছেন, সাংবাদিককে নির্যাতন করার জন্য এনেছি, মারার জন্য নয়। এই সাংবাদিককে নির্যাতন করে অন্য সাংবাদিককে ভয় পাইয়ে দিতে হবে, যাতে তারা আমাদের বিরুদ্ধে আর না লেখে।

সাংবাদিক গোলাম সরওয়ারকে বেত দিয়ে, বেল্ট দিয়ে তিনদিন ধরে ওরা চরম নির্যাতন করেছে। মুখ দিয়ে বের করছে, আর মাইরেন না, আমি আর কখনও নিউজ করবো না।

সাংবাদিকের মুখ বন্ধ। মানবতার মুখ বন্ধ। সাংবাদিকের আছে কলম, আর ওদের আছে অবৈধ অস্ত্র। ওরা এই অবৈধ অস্ত্রের দ্বারা বৈধ কলমের মুখ বন্ধ করে দিবে। সাংবাদের বাল (পশম) ছিঁড়ে ফেলে দিবে। সাংবাদিকের যত দোষ, তারা লেখে। কেন লিখবে। সমাজে অন্যায় হবে, খাময়েখালী হবে। বলাৎকার হবে। নারী নির্যাতন হবে। পুকুর চুরি, বালু চুরি, নদী-সাগর চুরি হবে, যার যা খুশি তাই করবে। সাংবাদিক লিখবে কেন? এটা অন্যায় যে, সাংবাদিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখে।

কিশোর অপরাধীরা সমাজে ত্রাস সৃষ্টি করবে। মানুষকে মারবে, কাটবে। ‘বাল’ ছিড়ে পৈতা বানাবে। কিন্তু সাংবাদিক লিখবে কেন? এ সমাজটা তো তাদেরই, যাদের গায়ে শক্তি আছে। যারা জুলুম করতে জানে। সুতরাং তুমি ‘অফ’ যাও সাংবাদিক, তুমি হচ্ছো ‘বালে’র সাংবাদিক। তোমার মতো ‘বেইল’ নাই সাংবাদিকের এ সমাজে দরকার নেই। যা চট্টগ্রামের সাংবাদিককে নির্যাতনের সময় অপরাধীরা বলেছিল।

তুমি সাংবাদিক থাকলেই জগতে সব ভেজাল। তুমি অপরাধীদের বাড়া ভাতে ছাই দাও। তোমার জন্য অপরাধীরা নির্বিঘেœ তাদের কাজ চালাতে কষ্ট হয়। অফিসে কর্মকর্তারা ঘুষ খাবে। বাড়ি করবে, গাড়ি করবে। তোমার কি দরকার এগুলো নিয়ে লিখে নির্যাতনের শিকার হওয়া। বরং তোমার কণ্ঠ চিরতরে রোধ করতে আমরা আছি তোমার পাশে।

এটা হচ্ছে আজকের সমাজের অন্ধকার জগতের অপরাধীদের ভাবনা। তারা তাদের গতিতে চলে, আর আইন চলবে, বিচার চলবে তাদের গতিতে। এখন দেখার বিষয়, কার দৌড়ের গতিবেগ কত? আইনের নাকি অপরাধীদের!

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

০৩ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ১৮ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, মঙ্গলবার