ঘৃণ্য বলাৎকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন নেই কেন?

মিজানুর রহমান রানা :
বলাৎকার বা সমকামিতাকে আল কুরআন নজিরবিহীন ঘৃণ্য কর্ম বা ফাহিশা কাজ বলে অভিহিত করেছে। আল্লাহতায়ালা কুরআন মাজিদে উল্লেখ করেন, “এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল : তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ? তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ। তাঁর সম্প্রদায় এ ছাড়া কোন উত্তর দিল না যে, বের করে দাও এদেরকে শহর থেকে। এরা খুব সাধু থাকতে চায়। অতঃপর আমি তাকে ও তাঁর পরিবার পরিজনকে বাঁচিয়ে দিলাম, কিন্তু তার স্ত্রী। সে তাদের মধ্যেই রয়ে গেল, যারা রয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। অতএব, দেখ গোনাহগারদের পরিণতি কেমন হয়েছে।”

বাংলাদেশে এখন এই বিষয়টি বেশ সামনে এসেছে। সারাদেশে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এ অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো আলোচনা-সমালোচনা বা আন্দোলন নেই। কিন্তু এ ঘৃণ্য চিন্তা-ভাবনা বা কর্ম সম্পর্কে আমাদের সজাগ হওয়া দরকার আছে। আমাদের কোমলমতি সন্তানদের ওপর এসব ভণ্ড নরপশুরা ভালোমানুষের লেবাস পরে যে ঘৃণ্য কর্মতৎপরতা চালাচ্ছে তাতে জ্ঞানী, সুফী ও সৎ মানুষ আলেম-ওলামাদের সম্পর্কে মানুষ নেগেটিভ চিন্তা-ভাবনা করছে। তাই বিষয়টি নিয়ে সমাজের আলেম-ওলামাসহ জ্ঞানী ব্যক্তিদের সোচ্চার হওয়ার একান্ত প্রয়োজন।

ঘটনা-১ :

সংবাদে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) রাতে লক্ষ্মীপুরে একাধিক শিশু ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে একটি বেসরকারি মাদরাসার পরিচালক ও মৌলভী মোবারক হোসেনকে (২৮) আটক করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম কালিদাসেরবাগ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। এর আগে স্থানীয় মুসলিমাবাদ তা’লীমুল কোরআন ইসলামী একাডেমী ভবনে মৌলভী মোবারক হোসেনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা। এসময় খবর পেয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে ৬ জন ভিকটিমসহ অভিযুক্ত মোবারক হোসেনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ভিকটিম এক ছাত্রের মা বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত মোবারক হোসেন সদর উপজেলার মুসলিমাবাদ তা’লীমুল কোরআন ইসলামী একাডেমীর পরিচালক এবং রায়পুর উপজেলার চর কাচিয়া গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক মোবারক হোসেন অন্তত ৬ জন শিশুছাত্রকে একাধিকবার বলাৎকার করেছে। এ বিষয়টি গোপন রাখতে তিনি ছাত্রদের ভয়ভীতি দেখিয়ে শপথ করান এবং তা মোবাইলফোনে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। সম্প্রতি এক শিশুর পায়ুপথ দিয়ে রক্ত ঝরায় ঘটনাটি জানাজানি হয়। স্থানীয়রা জানায়, ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম কালিদাসেরবাগ এলাকায় ‘মুসলিমাবাদ তা’লীমুল কোরআন ইসলামী একাডেমী’ নামে একটি প্রাইভেট মাদরাসা চালু করেন মোবারক হোসেন। তিনি স্থানীয় মসজিদে ইমামতি করার পাশাপাশি এ মাদরাসাটি চালু করেন। এখানে ৩০ জন ছাত্র আবাসিকে থেকে পড়া লেখা করে আসছিল।বলাৎকারের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন মাদরাসাটি বন্ধ ঘোষণা করে এবং ছাত্রদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। লক্ষ্মীপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল কবির জানান, একাধিক শিশু ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে মোবারক হোসেন নামে একটি বেসরকারি মাদরাসার পরিচালক ও মৌলভীকে আটক করা হয়েছে।

ঘটনা-২ :
রোববার (০১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ১১ বছরের এক মাদ্রাসা ছাত্রকে হাত পা বেঁধে বলৎকারের অভিযোগে আনা মিয়া নামে (৫২) এক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে থানা পুলিশ। উপজেলার পেরিয়া ইউনিয়নের উত্তর শাকতলী ছাতিয়ারা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। অভিযুক্ত আনা মিয়াকে আদালতের মাধ্যমে সোমবার (০২ নভেম্বর) জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে মাদ্রাসা ছাত্রটি উত্তর শাকতলী গ্রামের একটি পরিত্যক্ত মৎস্য প্রজেক্টে ঘুরতে যায়। সেখানে আনা মিয়া ওই ছাত্রটিকে একা পেয়ে তার হাত পা বেঁধে জোরপূর্বক মাছের প্রজেক্টের পরিত্যক্ত স্যালোমেশিন ঘরে নিয়ে বলৎকার করে। পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য রোববার সন্ধ্যায় শালিস বৈঠক বসে। তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে নাঙ্গলকোট থানার উপপরিদর্শক মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন খন্দকার ওই শালিস বৈঠক থেকে আনা মিয়াকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। এই ঘটনায় শিশুর পিতা বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় মামলা দায়ের করেন। নাঙ্গলকোট থানার অফিসার ইনচার্জ বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘খবর পেয়ে শালিস বৈঠকে অভিযান চালিয়ে আনা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে সে বলৎকারের বিষয়টি স্বীকার করে।’

ঘটনা-৩ :
শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডির উম্মুল কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় গলা টিপে এক ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, যৌন নির্যাতনও করা হয়েছে শিশুটিকে। এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত শিক্ষক। তার গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে মাদ্রাসার সামনে মানববন্ধন করেছে পরিবার ও এলাকাবাসী। রাজধানীর ধানমন্ডির উম্মুল কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জানান, নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছে ওই শিক্ষককে। ১২ বছর বয়সী ছেলে সন্তানকে নির্যাতনের বিচার না হওয়ায় বাবার নেতৃত্বে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর ধানমন্ডির উম্মুল কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার সামনে হওয়া এ মানবন্ধনে অংশ নেন এলাকাবাসীও। পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদ্রাসাটির শিক্ষক আব্দুর রহমান বশির শিশুটির গলা চেপে ধরে মারধর করেন এবং বলাৎকারের চেষ্টা করেন। এরপর থেকেই কথা বলতে পারছে না শিশুটি। এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষকের বিচার দাবি করেছেন তারা। শিশুটির বাবার দাবি, থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি তারা। শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আমরা দুই দিন পর আবার মামলা করতে গেলাম, কিন্তু তারা বলছে ঢাকা মেডিকেলের যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে সেই কাগজ নেই, আপনার মামলা থাকবে না। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই, আমার ছেলের সুষ্ঠু চিকিৎসা চাই, যাতে আমার ছেলে আবার সুন্দরভাবে কথা বলতে পারে।’ এদিকে, মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ জানান, অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে বলাৎকারের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি। উম্মুল কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বলেন, ‘শিশুটিকে শিক্ষক মারছে, এটা আমরা শুনছি। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। থানায়ও মামলা হয়েছে। মামলা বিচারাধীন আছে এবং তদন্ত চলতেছে।’ ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক। হাজারিবাগ থানা পুলিশ বলছে, তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মাদ্রাসাটি।

ঘটনা-৪ :
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) চট্টগ্রামে ঘটে আরেকটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। রাঙ্গুনিয়ার একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক নাছির উদ্দিনের (৩৫)। সে নিজ মুখেই পুলিশের কাছে স্বীকার করে, ‘স্যার, ওরা তো খুব ছোট। তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি, যেন ওরা বেশি ব্যথা না পায়। আমি তো ওদের শিক্ষক, ওরা ব্যথা পেয়ে কান্নাকাটি করলে আমার খুব কষ্ট লাগে।’ ভাষ্যটি রাঙ্গুনিয়ার একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক নাছির উদ্দিনের (৩৫)। নিয়মিত অগণিত শিশুকে তার লালসার শিকারে পরিণত করলেও গ্রেফতার হওয়ার পর আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার শিশুদের প্রতি এমনই সদয় হওয়ার কথা জানান তিনি। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন তার ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসে তুলে ধরেছেন এসব তথ্য। তিনি লিখেছেন, ‘নাছিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ফিরিস্তি শুনলে এ মায়াবাক্যাকে আপনার কাছে পরিহাসই মনে হবে। মাদ্রাসার হোস্টেলের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে থাকার সুযোগ নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক শিশু ছাত্রকেই নিয়মিত বিছানার সঙ্গী করে সে। ঘটনা সংক্রান্তে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে যা বের হয়ে আসে, তাতে শিউরে উঠবেন যেকোনো মানুষই। ধর্ষণ করার জন্য মূলত দশ বছরের নিচে বয়সী ছেলেশিশুদেরকেই টার্গেট করত সে। কোন শিশু তার আহ্বানে সাড়া না দিলে তাকে বাধ্য করার জন্য কারণে অকারণে তাকে বেধড়ক মারধর করা হতো। যেহেতু সেখানে বেশিরভাগ শিশুই এতিম/দরিদ্র পরিবার থেকে আসা, শেষ পর্যন্ত তার পক্ষে হুজুরের প্রস্তাবে হ্যাঁ বলা ভিন্ন কোনো উপায় থাকতো না। নাছিরের ছেলেশিশু আসক্তি এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিলো যে, বিষয়টি টের পেয়ে তার স্ত্রী তিন বছরের সন্তানকে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যান। নির্যাতনের শিকার ওইসব শিশুর প্রতি সহমর্মি হবার পাশাপাশি নাছির আবার ভীষণ রকম নিয়মনিষ্ঠও। বিশৃঙ্খলা তার একদমই অপছন্দ। তাই তো তিনি একেবারে রুটিন করে দিয়েছেন, ওস্তাদের খেদমতে কবে কখন কোন শিশু হাজির হবে। যেন সেই গল্পের অত্যাচারী সিংহের মতো, যে কিনা বনের পশুদের সাথে চুক্তি করেছিল যে, প্রতিদিন একটি করে প্রাণী খাবার হিসেবে তার নিকট চলে আসলে সে আর যার তার ওপর অত্যাচার করবে না। এই করে বেশ ভালমতোই চলে আসছিল শিক্ষকতার আড়ালে তার বেপরোয়া বিকৃত যৌনজীবন। ছাত্ররাও মারধর, হুমকি ধামকির ভয়ে নীরবে নিশ্চুপে সব সয়ে যাচ্ছিল। ঝামেলা শুরু হয় সোমবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায়। এক অভিভাবকের কাছ থেকে প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়ার পর বিশদ অনুসন্ধানে উঠে আসে বলাৎকারকারী নাছিরের গোপন বিকৃত যৌনজীবনের অবিশ্বাস্য সব খতিয়ান। তারপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের এবং মধ্যরাতে পরিচালিত অভিযানে গ্রেফতার করা হয় ভণ্ড হুজুর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে। কিন্তু গ্রেফতারের পর রীতিমতো ভোল পালটে ফেলে সে। বারবার পুলিশের নিকট দাবি করতে থাকে, তিনি নাকি কাউকে জোর করে বিছানায় নিতেন না, ছাত্ররাই নাকি স্বেচ্ছায় তার সঙ্গ নিতে আসতো। যদিও গরিব ঘরের অসহায় ছেলেগুলোর সাথে দিনের পর দিন কোন কৌশলে, কি কি ঘটিয়েছে নরপশু নাছির সেটা বলেনি। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সকালে আদালতে পাঠানো হলে নাছির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত বলাৎকারের অভিযোগ স্বীকার করেছে। পাশাপাশি বলাৎকারের শিকার শিশুদের মধ্যে চারজনও আদালতে উপস্থিত হয়ে তাদের ওপর চালানো নির্মমতার বর্ণনা দেয়।

এসব অন্যায় অপকর্ম দেখেও যারা চুপটি মেরে বসে আছেন, তাদেরকে বলছি, মহান আল্লাহতায়ালা আপনাকে বিবেক দিয়েছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন। এবং মহান রাব্বুল আলামিন আপনাকে এসবের ব্যাপারে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করবেন।

আপনার আশেপাশে এমন ন্যাক্কাজনক ঘটনা ঘটছে, আর আপনারা এসবের প্রকাশ্য প্রতিবাদ করছেন না। এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর আন্দোলন করছেন, তার জন্য আপনাকে অবশ্যই আল্লাহর দরবারে জবাব দিতে হবে।

এ ঘৃণ্য কর্মটি সম্পর্কে ইসলাম কী বলে, জেনে নিন :

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন: মুহাম্মদ বলেছেন: তোমরা যদি লূতের সম্প্রদায়ের কর্মে লিপ্ত কাওকে খুঁজে পাও,[৪৯] হত্যা কর তাকে যে এটি করে, এবং তাকে যার উপর এটি করা হয়।

— সুনান আবু দাউদ, ৩৮:৪৪৪৭ (ইংরেজি), আল-তিরমিযী, ১৫: ১৪৫৬, ইবনে মাজাহ, ২০: ২৫৬১

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ বলেছেন: কোন অবিবাহিত পুরুষ যদি লিওয়াত/সডোমিতে (পায়ুমৈথুনে/পুংমৈথুনে) লিপ্ত অবস্থায় ধরা পড়ে, তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হবে।  সুনান আবু দাউদ, ৩৮:৪৪৪৮ (ইংরেজি)

ইবনে আল-জাওজি (১১১৪-১২০০) ১২-শতাব্দীতে লিখিত তার বইয়ে দাবি করেছে যে মুহাম্মদ বেশ কয়েকটি হাদীসে “লুতি”দেরকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং সমকামী আচরণে উভয় সক্রিয় ব্যক্তির জন্য মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করেছেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে: “নবী (সাঃ) বলেছেন:” …লূতের সম্প্রদায়ের কাজ যে করে সে অভিশপ্ত। “

আহমদ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি লূতের সম্প্রদায়কে আমল করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করুন, যিনি লূতের সম্প্রদায়ের ক্রিয়া করেন, আল্লাহ তাকে অভিশাপ দিন” তিনি তিনবার অভিশাপ দিয়েছিলেন। মুসনাদে আহমাদ: ২৯১৫

আল-নুয়ায়রি (১২৭২–১৩৩২) তার নিহায়া গ্রন্থে উদ্ধৃত করেন যে মুহাম্মাদ বলেছেন তিনি তার সম্প্রদায়ের জন্য লুতের জণগণের কর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয় করেন (মদ ও নারীর ছলনার ব্যাপারে তিনি সমতুল্য ধারণা পোষণ করেছেন বলে মনে করা হয়।)।

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আকীল হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, জাবিরকে আমি বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আমি যে কুকর্মটি আমার উম্মাতের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সর্বাধিক ভয় করি তা হল লুত সম্প্রদায়ের কুকর্ম।  তিরমিজি: ১৪৫৭, ইবনু মা-জাহ: ২৫৬৩

পরিশেষে বলবো, কিছু কিছু মাদ্রাসায় এমন ঘৃণ্য অপতৎপতায় লিপ্ত ভালো মানুষের লেবাসধারী ভণ্ডদের জন্যে ক্ষতি হচ্ছে ইসলামের। সত্যিকার মুসলমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে পরিবারের বাবামায়ের ইচ্ছে ছিলো তাঁর সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়াবেন, দুনিয়া ও আখেরাতের জন্যে আল্লাহতায়ালার কাছে প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে উল্লেখ করবেন, সেই বাবা-মা বা অভিভাবকগণ এসব ঘৃণ্য তৎপরতা দেখে এখন ভয় পাচ্ছেন মাদ্রাসায় তাদের সন্তানদেরকে পাঠাতে। সুতরাং আলেম সমাজের এখন ভেবে দেখার বিষয়, তারা কি করবেন? এসব লেবাসধারী মানুষের মুখোশ খুলে দিয়ে এদেরকে শাস্তি দিয়ে অন্যান্য অপকর্মকারীদেরকে প্রতিহত করবেন, নাকি নীরবে সয়ে যাবেন।

 

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

০৪ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ১৯ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, বুধবার