দেশের চলমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সেদিন নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টে যাওয়া মোটেই সমীচীন হয়নি। এ ঘটনায় নিজের ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, সেদিন নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে যে, আমি কেন এ পরিস্থিতিতে রিসোর্টে গেলাম। হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি যে, এমন অসাবধানতাবশত সেখানে আমার যাওয়া সমীচীন হয়নি। আমি জানতাম না যে দেশের মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে। সন্ত্রাসীরা আমার চরিত্রহরণের উদ্দেশে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এসময় তিনি বলেন, ইসলামে চারটি বিয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশের আইনেও একাধিক বিয়েতে বাধা নেই। কাজেই আমি দ্বিতীয় বিয়ে করেছি এতে কার কী? আমি যদি স্ত্রীদের কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত করে থাকি, তবে আমার বিরুদ্ধে পরিবার অভিযোগ দিতে পারে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ কি সে রকম কিছু দেখাতে পেরেছে?
তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমি কী বলব না বলব, সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু ফোনালাপ ফাঁস করে আমার ব্যক্তিগত অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। এটি যেমন দেশের আইনেও অপরাধ, তেমনি ইসলামি বিধানেও চরম গুনাহর কাজ। সুতরাং আমার ব্যক্তিগত ফোনালাপ যারা ফাঁস করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।
মামুনুল হক আরও বলেন, যেভাবে একের পর এক মানুষের ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করা হচ্ছে, এটি দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। এই যে এতগুলো ফোনালাপ ফাঁস করা হলো তাতে কী প্রমাণ মিলেছে যে, সে আমার বিবাহিতা স্ত্রী নয়? আমার একান্ত ব্যক্তিগত কথাগুলো কোন উদ্দেশে ফাঁস করা হলো?
রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা দেখছেন গত দুই দিন আগে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর তার চরিত্রহননের যে পন্থা সে পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে।
স্ত্রীর নামের বিভ্রাটের বিষয়ে মামুনুল হক বলেন, কেন আমি আমেনা তৈয়েবা বললাম, কেন সে জান্নাত আরা ঝর্ণা বলল। এসব বিষয় নিয়ে অনেক অনেক কথা হয়েছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই। আমার ওপর সন্ত্রাসী দল যখন চড়াও হয়ে আমার জীবন হুমকির ভেতরে ফেলে দিচ্ছিল, তখন আমি বলছিলাম আপনাদের কাছে কেন আমি বলব। তখন তাদের মারমুখী পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে আমি অনেক কিছুই বলেছি। তখন আমি এটাও বলেছিলাম আমি আপনাদের কাছে পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য দেব না। যদি কোনো তথ্য দিতেই হয় তাহলে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দেব। যখন পুলিশ আসে তখন আমি সঠিক তথ্য দিয়েছি। আমার স্ত্রীদের নাম বলেছি।
গত শনিবার (৩ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়াল রিসোর্টে মামুনুল হককে নারীসহ অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করলে নারীকাণ্ড নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
এরপরই গত দুই দিনে ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এরইমধ্যে সরকারের একাধিক মন্ত্রী হেফাজতের তাণ্ডবের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি সাদা পোশাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও তার গতিবিধি নজরদারি করছেন।
এর আগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকালে দেশে সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশে মোট ২৫টি মামলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ওই ঘটনার জন্য হেফাজতকে দায়ী করা হলেও মামলাগুলোতে সংগঠনটির নেতাদের নাম দেওয়া হয়নি।
তবে গত ২৬ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় ৫ এপ্রিল হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক খন্দকার আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলাটি করেন।