ইসলামের দৃষ্টিতে নেককারদের মৃত্যু

হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে সার্বিকভাবে প্রবেশ করো তোমরা পরিপূর্ণ মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা। জেনে রাখো মৃত্যু হলো মুমিনদের জন্য তোহফা তথা পুরস্কার স্বরূপ চরম ও পরম সৌভাগ্য লাভের মাধ্যমে। অতঃপর নিঃসন্দেহে মুমিনের জন্য মৃত্যু আল্লাহপাকের অশেষ ও বিশেষ মেহেরবানি।
সম্মান প্রদর্শন ও অনুপম মাধুর্যপূর্ণ নেয়ামত বা মুমিন বান্দাকে জান্নাতে পৌঁছে দিয়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ করে দিবে এবং প্রার্থীব দুঃখ-দৈন্য ও বালা মুসিবত হতে চির মুক্ত করে দিবে।

অতএব হে মুমিনগণ! তোমরা নেক আমলের পাথেয় সংগ্রহ করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো এতে করে তোমরা আল্লাহ পাকের রহমত লাভের আশা করতে পারো।
(সূরা বাকারা-২০৮)।

হে পবিত্র শান্ত প্রাণ! তুমি তোমার প্রতিপালকের দরবারে সন্তুষ্ট ও আনন্দিত হয়ে প্রত্যাবর্তন করো এবং আমার নেককার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয় আমার বেহেশতে প্রবেশ করো।
(সূরা আল ফজর ২৭-৩০)।

এ ব্যাপারে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হযরত ওবাদা বিন সাবিত (রাঃ)-হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ- রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহ পাকের সাক্ষাৎ লাভকে ভালোবাসেন আল্লাহ পাকও তার সাক্ষাৎ লাভ কে ভালবাসেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ কে ভালোবাসে না আল্লাহ পাকও তার সাক্ষাৎ লাভকে ভালোবাসেন না।

এতদশ্রবণে হযরত আয়েশা (রাঃ)-অথবা রাসূল (সাঃ)-এর কোন স্ত্রী বললেন হুজুর! আমরা তো মৃত্যুকে অপছন্দ করি।

তিনি উত্তরে বললেন ব্যাপার তা নয় বরং আসল ব্যাপার হলো মুমিনের নিকট যখন মৃত্যু উপস্থিত হয় (যা স্বভাবগতভাবে তার নিকট অপছন্দনীয়) তখন তাকে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্ট ও সম্মানের সুসংবাদ দেওয়া হয়। ফলে তখন দুনিয়ার কোন বস্তুই (ধন-জন) তার নিকট অধিক প্রিয় বলে মনে হয় না যা তার সম্মুখে থাকে (আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সম্মান প্রদানের চেয়ে)।
সুতরাং সে আল্লাহ পাকের সাক্ষাৎ লাভকে মনে-প্রাণে কামনা করতে থাকে এবং আল্লাহ পাকও তার সাক্ষাৎ লাভকে পছন্দ করতে থাকেন।
(বুখারী ও মুসলিম)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ)-ইরশাদ করেনঃ-তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ সে নেককার হলে এটাই আশা যে সে ভবিষ্যতে আরো অধিক নেকী অর্জন করবে আর যদি সে পাপী হয় তাহলে সম্ভাবনা রয়েছে সে তওবা করে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভে সমর্থ হবে।
(বুখারী)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ)-ইরশাদ করেনঃ-মুমূর্ষ ব্যক্তির নিকট ফেরেশতাগণ উপস্থিত হোন যদি সে ব্যক্তি নেককার হয় ফেরেশতাগণ বলেন বের হয়ে এসো হে পবিত্র প্রাণ!যা ছিলে পবিত্র দেহে,বের হয়ে এসো তুমি প্রশংসার সাথে আর সুসংবাদ গ্রহন করো।
সুখ-শান্তি ও সুখাদ্যের বিশেষ করে তোমার প্রতিপালক যে তোমার প্রতি ক্রোধহীন এভাবে তাকে বলা হতে থাকে যে পর্যন্ত না সে বের হয়ে আসে।
অতঃপর তাকে আসমানের দিকে উঠানো হয়।

তখন খুলে দেওয়া হয় তার জন্য আসমান এবং জিজ্ঞেস করা হয় এ কে? ফেরেশতাগণ বলেন অমুক! তখন বলা হয় মারহাবা। হে পবিত্র প্রাণ! যা ছিলে পবিত্র দেহে প্রবেশ করো প্রশংসার সাথে এবং সুসংবাদ গ্রহণ করো সুখ-শান্তি সুখাদ্য ও তোমার প্রতিপালকের ক্রোধহীনতার।
এভাবে তাকে বলা হতে থাকে যে পর্যন্ত না তাকে ঐ আসমানে উপনীত করা হয় যাতে আছেন মহান আল্লাহ তা’আলা।
(ইবনে মাজাহ)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ)-ইরশাদ করেন আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন কিছু তৈরি করে রেখেছি যার দিকে কারোর চোখ পড়েনি যার কথা কেউ কানে শুনেনি এবং কোন মানুষের অান্তরিক ধারণা অতিক্রম করেনি।
(বুখারী শরীফ)।

হযরত আনাস (রাঃ)-হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ)-ইরশাদ করেনঃ-তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদের শিকার হয়ে মৃত্যু কামনা না করে।অগত্যা সে যদি তা করতে চায় তবে যেন বলেঃ-
“হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখুন যে পর্যন্ত জীবন আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়,আর যদি মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে আমাকে মৃত্যু দান করুন”।
(বুখারী ও মুসলিম)।

পরিশেষে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এ বিরাট আকাঙ্খিত পুরস্কার লাভের তৌফিক দান করুক তিনি উভয় জগতে একমাত্র তৌফিক দানকারী।
আল্লাহুম্মা আমিন।

মোঃ-রফিকুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীঃ-ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়।
মোবাইলঃ-০১৭৪৮-১৪০৭১৩