করোনার ভয়াবহতা থেকে উত্তরণের উপায় কি? আমরাতো ভালোই ছিলাম!

ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী জৈনপুরী :

বাংলাদেশে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি পার হচ্ছে। ধীরে ধীরে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েই চলছে। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেকটাই বিপদসংকুল হুমকির মুখে এবং বিশেষজ্ঞদের ভাষায় আমরা (Third wave) তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা আমরা সামলাচ্ছি।

দ্বিতীয় ধাক্কাতেই পরিস্থিতি বেসামাল অনেকটা বেসামাল হয়েছিল। তৃতীয় ধক্কায় পরিস্থিতি যে কোথায় যাবে তা চিন্তা করতে গেলে দেহে শিহরণ এসে যায়! আল্লাহ আমাদের ভালো রেখেছিলেন। করোনার আঘাতে যখন ইউরোপ,আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশগুলো বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল, আমরা খেয়ে-পরে, চলে-ফিরে ভালোই ছিলাম। কিন্তু সেই ভালোটাকে ভালো হিসেবে গ্রহণ করে আল্লাহ’র শুকরিয়া আদায় করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের দেশের নাফরমানি কমে নাই, বেড়েছে।

আল্লাহ তা’য়ালার কাছে আত্মসমার্পণ করার যে শপথ নেয়ার প্রয়োজন ছিলো তা, আমরা নিতে পারি নাই। বিপর্যস্ত পৃথিবীতে আমাদের দেশে অর্থনৈতিক ক্ষতি খুব কম হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশ এবং অর্থনৈতিক উল্টোপথে হাঁটছে। সীমান্ত এলাকাগুলোতে হসপিটালগুলো খালি নেই।

ICU-গুলোতে সিট নেই,অক্সিজেন নেই। মানুষ বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। অদৃশ্য এই শক্তি মোকাবেলার কোনো Defensive Power আমাদের নেই। আল্লাহ’র বিশেষ রহমতে আমরা রক্ষা পেয়েছিলাম। কারণ আরব বিশ্বকে বাদ দিলে বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর কোথাও এতো মসজিদ-মাদরাসা, ওয়াজ-মাহফিল নেই।

লাখ লাখ মসজিদে সুমধুর কণ্ঠে আযানের পবিত্র ধ্বনি, মাদরাসা-মক্তবে কোরআন হাদিসের দারস, মাহফিলগুলোতে কোরআন কারিমের আলোচনা, হাদিস শরীফের ব্যাখ্যা, দরূদ-সালাম, মিলাদ-কিয়াম, যিকির-ফিকির নেক আমলগুলোর বরকতে রহমতের বেষ্টনে এই জাতিকে আল্লাহ তা’য়ালা বেষ্টন করে রেখে ছিলেন। কিন্তু আমরা অকৃতজ্ঞ, নাফরমান। কারণ আমরা আল্লাহ’র শুকরিয়া আদায় করতে পারিনি। আল্লাহ তা’য়ালা অকৃতজ্ঞতাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করেন।

কোরআন কারিমে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, “যদি তোমরা আমার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করো, আমি নিয়ামতকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিবো; আর যদি তোমরা আমার নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো জেনে রেখো আমার আযাব অত্যন্ত কঠিন”।

আমরা সেই আযাবের মুখোমুখি হচ্ছি। আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই মসজিদে আসি। কিন্তু  শপিংমল, ফ্যাক্টরি, বাজারে, ঘাটে এগুলোতে কোনো সামাজিক দূরত্ব নেই। লকডাউন, শাটডাউন সব মসজিদ-মাদরাসায় শুরু করেছি।

এটাইতো আল্লাহ’র নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা। একারণে ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য আমরাই দায়ী। আল্লাহ তা’য়ালা কোরআন কারিমে এরশাদ করেছেন, “জলে এবং স্থলে যত ফেতনা বিশৃঙ্খলা, আযাব-গজব প্রকাশ পায় সব মানুষের হাতের কামাই”।

আল্লাহ বলেন, তবে বেশিটাই আমি মাফ করে দেই। আমরাতো মাফের উপরেই আছি। আল্লাহ পাক যদি আমাদের মাফ না করতেন, যদি সব অপরাধের জন্য পাকড়াও করতেন তাহলে আমাদের অস্তিত্বকে ভূপৃষ্ঠে খুঁজে পাওয়া যেত না। তাহলে এটা আমাদের হাতের কামাই।

এখনও আমাদের তওবার দরজা খোলা আছে। আমাদের তওবা করতে হবে ব্যক্তিগতভাবে এবং জাতীয় পর্যায়ে। যদি আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের কবুল করে, “আল্লাহুম্মা আমিন”।