কুরবানির বিধান-২য় পর্ব

কুরবানির বিধান হলো এই যে, প্রত্যেকেই যথাক্রমে একটি বকরী,গরু,উট কুরবানি করবে।অন্যথায় গরু বা উটের এক সপ্তমাংশ শরীক হবে।আর মহিষ গরুর হুকুমের মতোই।

কুরবানীর পশু জবেহ করার ব্যাপারে সুন্নাত তরিকা রয়েছে।যেমনিভাবে হযরত জাবের (রাঃ)-এর হাদীসে বর্ণীত রয়েছে,তিনি বলেন রাসূল (সাঃ)-একদা কুরবানীর দিনে দুটি ধূসর রঙের শিং ওয়ালা খাসি ও দুম্বা যবেহ করলেন,এবং যখন এদের কিবলামূখী করালেন।

রাসূল (সাঃ)-বলেন আমি আমার চেহারা ফিরালাম তার দিকে যিনি আসমান এবং যমীন সৃষ্টি করেছেন সকল দ্বীন হতে বিমূখ হয়ে এবং নিজকে ইব্রাহীমের দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত করে এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

আর আমার নামাজ,আমার জীবন,আমার মরণ সবই মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য।তার কোন শরীক নেই।
আর আমি এটার জন্যই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্গত।

হে আল্লাহ!
তোমার পক্ষ হতে প্রাপ্ত এবং তোমার জন্যই উৎসর্গীত!তুমি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এবং তার উম্মতগণের পক্ষ থেকে গ্রহন করো।বিসমিল্লাহ!আল্লাহু আকবার বলে জবেহ করলেন।
(আহমদ)

কুরবানীর পশু সর্বপ্রকার ত্রুটিমুক্ত হওয়া ওয়াজিব।খোঁড়া,কানা,অসুস্থ ও এমন বৃদ্ধ পশু,বার্ধক্যের কারণে হাড়ের ভিতরের মজ্জা শুকিয়ে গেছে।এমন পশু দ্বারা কোরবানী হবে না।

কুরবানির পশু নির্বাচন সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-কুরবানীর জন্য সেটা হবে একটা চতুষ্পদ জন্তু,যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়-বার্ধক্য ও যৌবনের মাঝামাঝি বয়সের।এবং পশুর রং হবে,গাঢ় পীতবর্ণের গাভী-যা দেখতে দর্শকদের মনকে আকর্ষিত করবে।

যদি কুরবানির গরু আমাদের কাছে সাদৃশ্যশীল মনে হয়।ইনশাআল্লাহ এবার আমরা অবশ্যই সুপথ প্রাপ্ত হবো।কারন,কুরবানির গাভী হবে ভূকর্ষণ ও জল সেচনের শ্রমে অভ্যস্ত নয়-হবে নিষ্কলঙ্ক,নিখুঁত। (সূরা বাকারা-৬৮-৭০)।

হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ)-বর্ণীত তিনি বলেনঃ- একদা রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ-কুরবানীতে কোন রকমের পশু বাছাই করা উচিত???তখন রাসূল (সাঃ)-স্বীয় আঙুল দ্বারা ইশারা করে বললেনঃ-চার রকমের পশু।
যেমনঃ-
১)খোঁড়া-যার খোঁড়ামি সুস্পষ্ট।
২)কানা-যার কানা হওয়া স্পষ্ট।
৩)রুগ্ন-যার রোগ স্পষ্ট।
৪)দুর্বল-যার হাড়ে মজ্জা নেই।
(মালেক)

কুরবানীর ফযিলত সম্পর্কে অনেক হাদীস রয়েছে।
হযরত আয়িশা (রাঃ)-হতে বর্ণীত রাসূল (সাঃ)-বলেনঃ-কুরবানীর দিনে বনী আদম এমন কোন আমল করতে পারে না,যা আল্লাহর জন্য রক্ত প্রবাহিত করা বা কুরবানির চেয়েও উত্তম হতে পারে।

কুরবানীকৃত পশুর শিং,পশম,ও খোরসহ কুরবানিকারীর পাল্লায় এসে হাজির হবে।
আর কুরবানিকৃত পশুর রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছেঁ যায়।অতএব তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি করো। (ইবনে মাজাহ)

হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ)-হতে বর্ণীত একদা রাসূল (সাঃ)-কে সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলো হে আল্লাহর রসূল!এই কুরবানি কী???
জবাবে রাসূল (সাঃ)-বললেন কুরবানি তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সুন্নাত নিয়ম।
তারা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন এতে আমাদের কি সওয়াব রয়েছে?

জবাবে রাসূল (সাঃ)-বলেনঃ-হ্যাঁ,কুরবানীকৃত পশুর প্রত্যেকটি লোমের পরিবর্তে একটি নেকি রয়েছে।
অতঃপর তারা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ-
পশমওয়ালা পশুদের পরিবর্তে কী হবে?
এদের পশমও তো অনেক বেশি।
প্রশ্নোত্তরে রাসূল (সাঃ)-বলেনঃ-প্রত্যেকটি লোমের পরিবর্তে একটি নেকি দেওয়া হবে।

মোঃ-রফিকুল ইসলাম রানা, শিক্ষার্থীঃ -ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।