টিকটকের গল্প …

নিউজ ডেস্ক :

তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কয়েক সেকেন্ডের নাচ, গান বা সৃষ্টিশীল কোন কার্যক্রমের ভিডিও বানিয়ে আপলোড দেয়াই কাজ। মাত্র ২ বছরে এ অ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা হয়েছে লাখ লাখ।

১৫ সেকেন্ডের ভিডিও দিয়ে লাখ লাখ ডলারের মার্কেটিংও সম্ভব এই অ্যাপ দিয়ে। যখনই সৃষ্টিশীল আর মেধাবী তরুণরা এই অ্যাপের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন, তখনই ঘটে বিপত্তি। সতর্ক করে দেয়া হয় এ অ্যাপ ব্যবহারের বিষয়ে। সেই আলোচিত অ্যাপটিই হল টিকটক।

শুরুটা অনেকটা এরকমই। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের নাচ, গান, ফান/কমেডি বা সৃষ্টিশীল কোন ভিডিও আপলোডের জন্য চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স ২০১২ সালে একটি ভিডিও শেয়ারিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করে। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র মিউজিক্যালি নামের আরেকটি অ্যাপ বাজারে ছাড়ে। বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে এই অ্যাপ।

২০১৬ সালে চীনা টেক জায়ান্ট বাইটড্যান্স বাজারে ছাড়ে দোউইন অ্যাপ। মাত্র ১ বছরে থাইল্যান্ড আর চীনে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাড়ায় ১০ কোটিতে।

জনপ্রিয়তা বিবেচনায় ২০১৮ সালে মিউজিক্যালি কিনে নিয়ে দোউইনের সঙ্গে মার্জ করে সারাবিশ্বে এই অ্যাপটি টিকটক নামে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেন বাইটড্যান্স।

এই অ্যাপের বিশেষত্ব মিউজিক আর অ্যালগরিদম। এই অ্যাপের ধারণা থাকে ব্যবহারকারী কি ধরনের কন্টেন্ট পছন্দ করবেন। আবার ব্যবহারকারীরা বৃহত্তম সংগ্রহশালা থেকে গান, ফিল্টার, মুভি ক্লিপও ব্যবহার করতে পারেন। ‘ফর ইউ’ পেজ স্ক্রল করে অনেকে সময় কাটান।

ভিডিওর বিষয়বস্তু যদি ভালো হয়, এটি ব্যবহারকারীর সব ফলোয়াদের কাছে পৌঁছাবে। এই অ্যাপের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে অনেক টিকটক কমিউনিটি।

গেলো বছরের জুলাই পর্যন্ত ১শ’ কোটি বার ডাউনলোড হয়েছে এই অ্যাপটি। বিশ্বব্যাপী এই অ্যাপের ৫০ কোটি ব্যবহারকারী ছিলো। আর এ বছর ডাউনলোডের সংখ্যা পৌঁছেছে ২শ’ কোটিতে, ব্যবহারকারী পৌঁছেছে ৮০ কোটিতে।

এই লাভজনক অবস্থান কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে রাজনীতিবিদদের। কিভাবে চীনা অ্যাপটি আধুনিক জীবনের একটি অংশ হয়ে গেলো।

হঠাৎই যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতের মনে হলো, এই অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে চীন অনেক দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করছে। পর্নোগ্রাফি প্রচার করা হতো, এমন অভিযোগ এনে ২০১৯ সালে ভারত সাময়িক বন্ধ করে দেয় এই অ্যাপ। তথ্য চুরি আর পাচারের অভিযোগ এনে ২০২০ সালে টিকটকের সঙ্গে আরও কিছু অ্যাপ বন্ধ করে দেয় ভারত।

 

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকান, দুই দলই মনে করে টিকটক ঝুঁকিপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রে চীনের টিকটক চলবে না।

এরপরই টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট টিকটকের আমেরিকান শাখা কিনে নিতে আগ্রহ দেখায়। সেখানেও ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি মাইক্রোসফটের সঙ্গে চুক্তি হলে অর্থের একটি অংশ মার্কিন সরকারকে দিতে হবে, না হয় ব্যান করা হবে টিকটক। ব্রিটেন আর অস্ট্রেলিয়াও তদন্ত চালাচ্ছে, কিন্তু এখনো কোন তথ্য প্রকাশ করেনি দেশগুলো।

এখন জানবো টিকটকে আসলে কি গোপন তথ্য পাওয়া যেতে পারে? ভিডিও দেখা আর কমেন্ট দেখা, লোকেশন দেখা, ফোনের মডেল আর অপারেটিং সিস্টেম দেখা, তথ্য কপি পেস্টও করা যায় এই অ্যাপে, যেটা রেড্ডিট, লিঙ্কডইন কিংবা বিবিসি নিউজ অ্যাপেও করা যায়। তাই ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বৈরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক, চীন-ভারতের সীমান্ত দ্বন্দ্ব, নিরাপত্তা আইন নিয়ে হংকং-ব্রিটেনের দ্বন্দ্বেই টিকটক তোপের মুখে পড়েছে বলে ধরা হচ্ছে।

তথ্য সংগ্রহ আর সরবরাহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কথাও জানায় টিকটক। টিকটকের প্রধান নির্বাহী কেভিন মায়ের জানান, অ্যালগরিদমের কোড পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞদের অনুমতি দেয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই তথ্য কি চীন অন্য দেশে সরবরাহের অনুমতি বাইটড্যান্সকে দেবে? টিকটকই প্রথম প্লাটফর্ম, যেটির মাধ্যমে তরুণরা বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের কন্টেন্ট শেয়ার করেন।

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকেও টিকটকের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু এর আগেও অনেকবার টিকটকের অ্যালগরিদম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

সবশেষ টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের অপারেশন সিস্টেমকে কিনে নিতে চেয়েছে মাইক্রোসফট। এ চুক্তির বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য থাকবে এ অ্যাপের ওপর।

টিকটকই এমন একটি অ্যাপ, যেটি ২৫ বছর বয়সের নিচে তরুণরা অনায়াসে ব্যবহার করতে পারে। আলোচনা সমালোচনা হলেও টিকটকের বিরুদ্ধে জোরালো কোন অভিযোগ না আসায় কোন দেশই এখনো টিকটক নিয়ে কোন কঠোর সিদ্ধান্তে যেতে পারেনি।