মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন

১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ২৭ ভাদ্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ২২ মুহররম ১৪৪২ হিজরি, শুক্রবার

সম্পাদকীয় …

অন্যায়ের প্রতিবাদীরা সবসময় চক্ষুশূল থাকে। কারণ, দুষ্টদের বিপক্ষে প্রতিবাদ করার জের তারা একসময় প্রতিশোধ হিসেবে নেয়। তারা সহ্য করতে পারে না প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর! কেননা, এতে তাদের বিরাট বাধা হিসেবে পরিগণিত হয় একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ। সে কারণে হয়তো সমাজে এতো অন্যায় বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে কেউ জীবন হারাতে চায় না। তাই নীরব থাকে কেউ কেউ; চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখলেও তাদের কিছ্ইু করার থাকে না। কিন্তু সমাজে এমনও কিছু লোক থাকে যারা অন্যায় কাজ সহ্য করতে পারে না। তারা প্রতিবাদ করেই চলে। আর এই প্রতিবাদী মানুষদের সরানোর জন্যে দুষ্টরা সবসময় ওঁৎ পেতে থাকে। সুযোগ পেলেই জীবন নিয়ে নিতেও তারা দ্বিধা করে না, অথবা পঙ্গু করে ছেড়ে দেয়।

এমনই একটি ঘটনা ঘটে গেছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে। প্রিয় সময়ে প্রকাশিত ‘দক্ষিণ ইচলীতে মাদক ব্যবসায়ীরা এবার ভেঙ্গে দিলো প্রতিবাদী যুবকের হাত’ ঘটনাটি সকল পাঠকের দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে। এমন অমানবিক ঘটনা এর আগেও বহুবার ঘটেছে, যারা প্রতিবাদ করেছে মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ছিলো মাদক বিক্রির বিরুদ্ধে বাধা দেয়া। এর প্রতিবাদ করাতে প্রতিবাদী যুবকের প্রতি নির্মম আচরণ করা হয়েছে।

আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি, প্রতিবাদী যুবককে পর পর দুইবার আক্রমণ করা হয়েছে। তাকে পিটিয়ে তার হাত ভেঙ্গে গিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। আমরা মনে করি, এভাবে আক্রমণ হতে থাকলে সমাজে মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসবে না। এর একটা বিহীত হওয়া উচিত। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার মাদক বিক্রেতাদের। যদি কোনো দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হয়, তাহলে সমাজে মাদক বিক্রেতারা আরো সাহস পেয়ে যাবে এবং সমাজে মাদকের ছড়াছড়ি দেখা যাবে।

সমাজে যারা মাদকের রাজ্য গড়ে তুলেছে, তারা মূলক সমাজকে তিলে তিলে নষ্ট করে দিচ্ছে। যুব সমাজ হারিয়ে যাচ্ছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে যুবকদের ভবিষ্যৎ। বিশেষ করে উঠতি বয়সী তরুণরা মাদকের প্রতি বেশি ঝুঁকে থাকে। তারা সমবয়সীদের পাল্লায় পড়ে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। একবার মাদকের গন্ধ পেয়ে বসলে তারা আর সেই পথ থেকে ফিরে আসতে পারে না। মাদকের টাকা জোগাড় করার জন্যে তারা পরিবারে অশান্তি করে থাকে। এমনকি পরিবারের মা বাবাকেও আক্রমণ করতে দ্বিধা করে না-এমন ঘটনা আমরা অতীতেও ঘটতে দেখেছি, শুনেছি। তাছাড়া চাঁদাবাজি, চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও তাদের দ্বারা হয়ে থাকে। আর যারা মাদক বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো সমাজে তেমন সাহসী মানুষ খুব একটা দেখা যায় না। যারা তাদের বিরুদ্ধে আসে তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়। তাদের উপর আক্রমণ করে তাদের জীবন পঙ্গুও করে দেয়। এজন্যে কউ তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলে না। ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা কারো তোয়াক্কা না করে, বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ব্যবসা চালাচ্ছে। তারা এতটাই প্রভাবশালী হয়ে থাকে যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে মৃত্যুর হুমকিও তারা দিতে সাহস রাখে।

প্রকাশিত সংবাদে আমরা দেখেছি, গত ৯ সেপ্টম্বর রাতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ঢালীরঘাট বাজারে সোহেল তালুকদারকে এলোপাথাড়ি রড দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। তার আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর বিল্লাল তালুকদারকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। উভয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বলা যায়, যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে তাতে তারা পঙ্গু হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। যদি সে রকমই কিছু হয়, তাহলে তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ কী হবে?

আমরা চাই না এভাবে মাদক ব্যবসায়ীরা মাথা উঁচু করে অন্যায় কাজ করে যাক। তাদের যদি কোনো আন্ডারগ্রাউন্ডে শক্তিশালী সিন্ডিকেট থাকে তাহলে তা খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা আশা করবো, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।

১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ২৭ ভাদ্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ২২ মুহররম ১৪৪২ হিজরি, শুক্রবার

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, প্রিয় সময় গুজব প্রচার করে না