চিরদিন রাখবে মনে এমন সময় কারো নেই

কথিকা 

ক্ষুদীরাম দাস :

উপরের বাক্যটি শিল্পী মান্না দে’র গানের একটি অংশ বিশেষ। গানটি শুনতে শুনতে ঐ অংশটুকু আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। সত্যিই, চিরদিন রাখার মতো মানুষও নেই; আবার কেউ মনেও রাখে না। এটা সময়ের নিয়ম। তবে স্বার্থপরতার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা; সেটা এক নিষ্ঠুরতার ব্যখ্যা।

সুতরাং দুঃখ পাবার কিছু নেই যে, কেউ আপনাকে একেবারে ভুলে গেছে-একথা ভেবে ভেবে আপনি হাহুতাশ করবেন। সেটা বরং করলে আপনার সময়ের যেমন অপচয় হবে; তেমনি কষ্টগুলোকে আঁকড়ে ধরে হতাশায় ভুগতে ভুগতে নিজেকে নিঃশেষ করে দিবেন। বরং সেটা করা মোটেও ভালো হবে না।

আপনার যদি মনে হয় কেউ আর আপনাকে আর স্মরণ করছে না-এজন্যে দুঃখ পাবার কিছু নেই। কেননা সময়ই কখনো কখনো আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে। হাই স্কুল অথবা কলেজ জীবনে আমাদের অনেক বন্ধুও ছিলো নিশ্চয়। একটু চিন্তা করে দেখুন, আমরা কতজনের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারছি; বা তারাই আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারছে কিনা। হয়তো আপনি মাঝে মাঝে তাদের স্মরণ করছেন; এভাবে তারাও হয়তো মাঝে মাঝে আপনাকে স্মরণ করছে। অথবা একেবারে ভুলেই গেছে। তবে কিছু স্মৃতি, অথবা কিছু কষ্টের কথা, অথবা কিছু ভালো লাগার কথাগুলো ঠিকই মনে আছে, মনে থাকবেও। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, আসলেই কেউ কেউ কোনো আপনজনকে ভুলে যায় না। জীবনের কাজের ব্যস্ততায় আমরা জড়িয়ে গেলে, অনেক কিছুই ভুলে যাই, আপনজনকেও ভুলে যাই। সেজন্যে দুঃখ পাবার কিছু নেই যে কেউ আপনাকে ভুলে গেছে। আপনিও তো কাউকে না কাউকে একেবারে ভুলে গেছেন।

সুতরাং অন্যের দোষ দিয়েই বা লাভ কি? সত্যিকারে শুধু প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মানুষ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় কখনো কখনো; তবে সেটা স্বার্থপরতা মাত্র। কিন্তু একটা কথা বলতেই হয় যে, কিছু স্বার্থপর থাকে, যারা সত্যিই আপনজন অথবা বন্ধুকে ভুলে যেতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করে। হয়তো কারো পরিস্থিতি ভালোর দিকে চলে গেছে, সুতরাং খারাপ পরিস্থিতিতে যারা আছে, তাদের স্মরণ করার দরকারই মনে করে না; তাই তারা একেবারে ভুলে যায়। আমরা যারা এসব নিয়ে দুঃখ পাই, তাদের জন্যে সান্ত¡না শুধু এটুকুই যে, এটাও স্বাভাবিক!