কথিকা
ক্ষুদীরাম দাস :
আমরা চাই না আমাদের কোনো বিপদ আসুক। আমরা সকলে ভালো থাকতে চাই, সুস্থ থাকতে চাই; আমরা অশান্তি চাই না, শান্তিতে ও সুখে থাকতে চাই, মনের আনন্দে থাকতে চাই। কিন্তু যদি বিপদ এসে যায় হঠাৎ করেই, সেটা আমাদের মোটেও প্রত্যাশীত নয়। বিপদ থেকে রক্ষার জন্যে আমরা চেষ্টা করি। তখন অন্যের সাহায্যের আমাদের দরকার হয়। আমরা তখন আশা করি, আমাদের আপনজন ছুটে আসুক বিপদের মুহূর্তগুলোতে এবং আমাদের পাশে থেকে আমাদের সাহায্য করুক। কিন্তু যদি এমন হয় যে, যাদের প্রতি আমাদের আশা, তারাই যদি আমাদের বিপদের দিনে না আসে তখন আমাদের কেমন লাগবে! নিশ্চয় দুঃখ হবে, মনে অনেক কষ্ট হবে। বিপদের দিনে কিছু বন্ধু, আত্মীয়স্বজন অথবা প্রতিবেশী স্বার্থপরের মতো আচরণ করে, যদিও আমরা এটা প্রত্যাশা করি না তবুও, এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে হয়। কিছু মানুষ এমনই হয়ে থাকে।
দুই বন্ধুর গল্পটি আমাদের দারুণ শিক্ষা দেয়। দুই বন্ধু পরস্পরকে খুবই ভালোবাসতো। একদিন বনের পথ ধরে হাঁটছিলো। একটি ভাল্লকু হঠাৎ তাদের সামনে ছুটে আসে। স্বার্থপরের মতো এক বন্ধু গাছে উঠতো পারতো বলে সোজা বন্ধুর কথা চিন্তা না করে গাছে উঠে নিজেকে রক্ষা করলো। অন্য বন্ধু মরার মতো ভাব ধরে সুইয়ে রইলো এবং ভাল্লুক নাক দিয়ে শুঁকে চলে গেলো। গাছ থেকে নেমে এসে বন্ধু তাকে জিজ্ঞাসা করলো, কানে কানে ভাল্লুক তাকে কী বলে গেলো। বন্ধু তাকে উত্তর দিলো, স্বার্থপরের সাথে বন্ধুত্ব করতে নেই।
এটি একটি শিশুদের গল্প মাত্র। কিন্তু আমাদের কঠিন শিক্ষা দিয়ে দেয়। সত্যিই, বিপদের দিনগুলোতে আমরা চিনতে পারি আমাদের সত্যিকারে আপনজন কারা, কারা আমাদের সত্যিকারে বন্ধু, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন। সুতরাং বিপদ আসলে আমরা এতদিন যাদের সাথে বিশ^াসে চলছি তারা কেমন সেটা জানা যায়। চিনতে পারার পাশাপাশি যাচাইবাছাই করতে পারি সত্যিকারে মানুষ কারা। সত্যি সত্যি, বিপদই আমাদের অনেক শিক্ষা দেয়, সত্যিকারে মানুষকে চিনিয়ে দেয়, কারা বন্ধু জানিয়ে দেয়, কারা সত্যিকারে আত্মীয় তাদেরকে চিনিয়ে দেয়।