ফরিদগঞ্জে ভাসমান বেডে কৃষকরা শীত-বর্ষায় সবজি চাষে সফল

মোঃ মহিউদ্দিন,ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) সংবাদদাতা :

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ভাসমান বেডে শীত- বর্ষায় সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে কৃষকরা ব্যাপক সু-ফল পেতে শুরু করছে। কৃষক ও কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় ভাসমান বেডে কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি ও চারা উৎপাদণের মাধ্যমে কৃষকরা লভবান হচ্ছে।

বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার অধিকাংশ নিচু জমি পানির নিচে চলে যায়। তখন কৃষদের তেমন কাজ থাকে না। বর্ষার ভরা মৌসুমে যখন শাক সবজির আকাল থাকে, তখন এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষক পরিবার নিজেদের কর্মসৃজন ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদণ করে বাজারে অধিক লাভেসবজী ও চারা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

উপজেলার বাঘপুর গ্রামের আবদুল কাদেরসহ এ পদ্ধতিতে গ্রামের শত শত কৃষক কামতা থেকে গল্লাক ওয়াপদা খালের পাশে ভাসমান বেডে শীতের সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীর অববাহিকার ভাটি অঞ্চল ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু এলাকা বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে থাকায় সেখানে অধিকহারে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও এ ধরনের চাষাবাদে রাসায়নিক সার ব্যবহার না হওয়ায় বিষমুক্ত সবজি উৎপাদণে কৃষকরা ভালো ভূমিকা রাখছে।

বর্তমানে ফরিদগঞ্জের সেকদি এলাকা ও বাঘপুর এলাকায় ১৫/২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ২‘শতাধীক ভাসমান বেড তৈরি করে বেডে সবজি চাষ চলছে। এ বেডগুলোতে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, কলমী শাক, লাল শাক, শসা, ডাটা শাক ও ধনিয়া পাতা আবাদ করা হয়েছে।পাশাপশি বেডগুলোতে এ সকল সবজীর চারা উৎপাদণ করে বাজারগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে।

উপজেলার বাঘপুর গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের ও মো: ফাহাদ হোসেন সহ আরো কয়েকজন জানান, কয়েক বছর ধরে কচুরিপানার স্তুুপ করে সবজি চাষ করে আসছি। বর্তমানে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ভাসমান বেডে সবজি চাষ করছি। আগের তুলনায় এখন বেশি লাভবান হচ্ছে।

চাঁদপুর সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্যে প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে চাঁদপুর- ফরিদগঞ্জ নৌ-পথ । এ নৌ-পথটি দির্ঘদিন কচুরি পানা জটলায় অচল হয়ে পড়েছে। আবহমান কাল থেকে এ নৌ-পথে শত শত নৌকা চলাচল করলেও বর্তমানে সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে পড়েছে। নৌ-পথটি স্বচল করতে ভাসমান বেডে সবজী চাষে কৃষকদের উদ্ধুদ করে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করলে হাজার হাজার ভাসমান বেড তৈরি করার পাশাপাশি নৌ- পথটি স্ব-চল করা যাবে। আর বেডগুলোতে সবজী উৎপাদণ করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশ ও দেশের বাহিরে ও রপ্তানি করা যেতে পারে বলে কৃষক ও কৃষিবৃদরা জানান।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ জানান, ভাসমান বেডে সবজি চাষে কৃষকদের জন্যে সহায়তা এবং পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে। ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি চাষ হওয়ায় এর চাহিদা অনেক বেশি। সরকারী অর্থায়ণেকৃষকদের মাঝে এ উপজেলায় ১৭টি ভাসমান বেড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি জানান, ভাসমান বেডে সবজী চাষ কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান । তাছাড়া পরিশেব বান্ধব একটি চাষ পদ্ধতিও বটে। ডাকাতি নদীর চাঁদপুর- ফরিদগঞ্জ নৌ-পথটি স্ব-চল করতে সরকারী বড় ধরণের অর্থবরাদ্দ পেলে কৃষকদের জন্য হাজার হাজার ভাসমান সবজী উৎপাদনের বেড তৈরি করা যেত। যেহেতু বেডগুলো শুধুমাত্র কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করা যায় । তাতে কচুরি পানা অপসারণ ও সবজী উৎপাদণ দুটো কাজই একত্রে করা সম্ভব হবে। অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে এ উদ্যোগটি গ্রহণ করা যেতে পারে।