রফিক-উল হকের প্রথম জানাজা সম্পন্ন, মরদেহ বাসায়

রাজধানীর আদ-দ্বীন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় তার প্রথম জানাজা হয়।

জানাজা পড়িয়েছেন আদ-দ্বীন হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ সাইদুল ইসলাম। জানাজা শেষে এ আইনজীবীর মরদেহ নেয়া হয় পল্টনের নিজ বাসায়। আদ-দ্বীন হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, পল্টনের বাসায় মরদেহ কিছুক্ষণ রাখার পর নেয়া হবে বায়তুল মোকাররমে। জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মরদেহ নেয়া হবে তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। সেখানে তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে বনানীর কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত করা হবে সাবেক এ অ্যাটর্নি জেনারেলকে।

আদ-দ্বীন হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, ‘ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের প্রথম জানাজা সকাল সাড়ে ১০টায় আদ-দ্বীন হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর হাসপাতাল থেকে মরদেহ তার পল্টনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তার মরদেহ কিছুক্ষণ থাকবে। সেখান থেকে নেয়া হবে বায়তুল মোকাররমে। সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা হবে। দুপুর ২টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আরেকটি জানাজা হবে। পরে তার মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।’

শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। আদ-দ্বীন হাসপাতালের পরিচালক ডা. অধ্যাপক নাহিদ ইয়াসমিন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

রক্ত শূন্যতা ও প্রস্রাবের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত জটিলতা দেখা দেয়ায় গত শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, ‘তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। আমাদের সবার চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন তিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৭ অক্টোবর হঠাৎ করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের। তার অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। তাৎক্ষণিক তাকে নেয়া হয় আইসিইউতে। এরপর থেকে তিনি আইসিইউতেই ছিলেন।’

এর আগে গত ১৬ অক্টোবর থেকে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রাজধানীর মগবাজারে আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি হন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। এরপর কিছুটা সুস্থবোধ করলে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরে যান। কিন্তু দুপুরের পরপরই ফের তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।

জানা গেছে, রক্তশূন্যতা, ইউরিন সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন প্রবীণ এই আইনজীবী। তিনি ডা. রিচমন্ড রোল্যান্ড গোমেজের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা তথা অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল)।

১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করেন। ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার এট ল’ সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন তিনি। বর্ণাঢ্য জীবনে আইন পেশায় দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর পার করেছেন।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী।

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

২৪ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. ০৮ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, শনিবার