মিজানুর রহমান রানা :
অমরত্ব অন্তর হৃদয় মনুষ্যত্ব বিষয়টি সম্পূর্ণ কাল্পনিক নয়। মানুষ হতে হলে তাকে কিছু বিষয়ে সামর্থবান হতে হয়। আমরা কিছু কিছু মানুষ দিন দিন হৃদয়হীন হয়ে পশুত‚ল্য কাজ করে থাকি। তাতে কোনও হৃদয় দিয়ে ভালোবাসা থাকে না। থাকে বিভীষিকাময় পশুত্ব। থাকে না মনুষ্যত্ব। মানুষের প্রতি মানুষের সহজাত যে ভালোবাসা তাকে উপেক্ষা করা নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনা।
মনে করুন, এক সুন্দর সকালে আপনি আজ একজন অন্ধকে পথ দেখালেন। মানে একজন মানুষ নানা কারণে অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। হয়তো বিষয়টা এমন হতে পারে যে, সংসার সীমান্তে সে খুব বিপদের মধ্যে আছে। ক‚ল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। তাকে আপনি হয়তো সামান্য একটা কথায়, কাজে পথ দেখালেন।
হয়তো বিষয়টা এমন, আপনি তাকে একটা সুপরামর্শ দিলেন। তাতে লোকটা জীবনে চলার ক্ষেত্রে একটা ক‚ল খুঁজে পেল। এমন অবস্থায় লোকটা উন্নতি করতে করতে এক সময় স্বাবলম্বী হলো। হয়তো সেটা পাঁচ বছর বা দশ বছর হতে পারে, সময়টা। লোকটা দৈন্যদশা কাটিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে আপনাকে খুঁজবে। খুঁজে পেলে সম্মান করবে, আর খুঁজে না পেলে আপনার জন্য সারাজীবন দোয়া করবে।
হয়তো তার এ দোয়ায় আপনি এ সময়ের অন্ধকারের সীমান্ত থেকে মুক্তি পেয়ে গেলেন। আর যদি আপনি ভালো অবস্থায় থাকে, তাহলে ওই লোকটার দোয়ায় আপনার মনে প্রশান্তি আসবে। আপনার মনে হবে, আপনি ভালো একটা কাজ করছেন, এতে আপনার হৃদয় মনে এক ধরনের আলোচ্ছটা বিকিরণ হবে।
আবার ধরুন, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি বা ব্যবসা বাণিজ্য এগুলো নিয়ে কেউ কাজ করছেন। তো রাজনীতি কি? রাজনীতি হলো একটা ভূখন্ডের সব ধরনের মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও নিরাপত্তার একটা সম্মিলিত বিষয়। এই বিষয়ে আপনি ছয়-নয় করলেন না। সঠিকভাবে কাজ করলেন। তেমনি সমাজনীতি, অর্থনীতি ব্যবসা বাণিজ্যের বিষয়টিও। এসব বিষয়ে আপনি কাউকে ঠকালেন না। সঠিকভাবে কাজ করলেন।
তো বিষয়টি এমন যে, একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি যখন রাজনীতিতে উদারতা গ্রহণ করবে, তখন ওই দেশের মানুষের মধ্যে সাড়া পড়বে। যেমন ধরুন বঙ্গবন্ধুর কথা। হৃদয়বান এই মানুষটি তার জীবনের বেশিরভাগ সময়টা জনগণের কল্যাণের চিন্তায় জেলে জেলে কাটিয়েছেন। জনগণের জন্য আন্দোলনে তাকে বার বার জেলে যেতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা অর্জন করেও পরিবারসহ জীবনের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে হয়েছে।
তো পরিণাম? পরিণাম তিনি যুগ থেকে যুগান্তরে, কাল থেকে কালান্তরে বেঁচে আছেন ও থাকবেন।
এমন হৃদয় চাই, যে হৃদয়ে শুধু ভালোবাসা। নেই ঘৃণা। ঘৃণা করে কেউ কখনো সফল হতে পারে না। কারণ ঘৃণা করে শুধুই ঘৃণিত হতে হয়। আর ভালোবেসে মরণেও সুখ। যদি তেমন মরণ হয়।
পাখির ডানা ঝাঁপটানি, কিচির মিচির, সুন্দর প্রভাত, আলোর ঝলকানি, মোহময়ী বিকেল, মননসুখ পেতে জীবনের একটা অর্থবহ রাগিনী প্রয়োজন। ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করে অহমিকা বোধ মানুষকে মুক্তি দেয় না। জোয়ারভাটা নদীকে সুদীপ্ত করে। ব্যক্তিত্বকে প্রস্ফুটিত করে। মানুষ হয়ে মানুষকে ভালোবাসা, দয়া মায়া, ত্যাগ তিতিক্ষা মানুষকে বেহেস্তের বাতাস দেয়।
এ পথে কাঁটা আছে। কাঁটা দূর করে এগুলো সফলতাও আছে। কণ্টকময় জীবন মানুষকে সফলতার হাতছানি দেয়। ভালোবাসতে শিখায়। ত্যাগ করতে শিখায়।
আমরা মূলত ভালোবাসতে জানি না। ভালোবাসায় ভালোবাসা মেলে। হৃদয়ে প্রশান্তি আনে। আমাদের ভালোবাসা হয়ে যায় ব্যক্তি পর্যায়ে, সেজন্য সেই ভালোবাসা মূল্যায়ণ করা কঠিন। রচনাকাল : ০৭ অক্টোবর ২০২১ খ্রি.