অথচ গল্পটা এমনও হতে পারত…

.
প্রিয়া সদ্য মেডিকেল পাশ করে ডাক্তার হয়েছে। এমন সময় একদিন লকডাউন চলাকালীন গাড়িতে করে হাসপাতালে যাচ্ছিলো। মাঝপথে সৎ এবং সুদর্শন পুলিশ অফিসার আকাশ গাড়ি থামিয়ে প্রিয়ার আইডি কার্ড দেখতে চায়৷

প্রিয়ার কাছে আইডি কার্ড না থাকায় আকাশ প্রিয়াকে গাড়ি থেকে নামতে বলে।

তখন বড়লোক ও মুক্তিযোদ্ধা বাবার আদরের মেয়ে প্রিয়া রেগে গিয়ে আকাশকে বলে, ‘তুই জানিস আমি কে? জানিস আমি কার মেয়ে? তোর মত দুই পয়সার পুলিশ আমাকে হয়রানি করিস? নিজে মেডিকেলে চাঞ্চ না পেয়ে পুলিশ হয়েছিস। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমাকে হয়রানি করার সাহস তোকে কে দিয়েছে…!’
.
তখন এইসব কথা শুনে রেগে যায় পুলিশ অফিসার আকাশ ও। সে রেগেমেগে বলে, ‘এনাফ, এন-আফ, হোয়াট ইউ থিংক? আর ইউ অনলি এডুকেটেড এন্ড ডাক্তার গার্ল? নো, ইউ আর রঙ। এন্ড ইওর আইডিয়া ইজ এবস্যুলুটলি রঙ। মাই ফাদার ইজ অলসো এ মুক্তিযোদ্ধা এন্ড আই এম অলসো এ মেডিকেল স্টুডেন্ট। তিন বছর আগে ঢাকা মেডিকেল থেকে ডিগ্রী নিয়ে বিসিএস দিয়ে পুলিশ হয়েছি! কিন্তু তোমার মত মেয়েরা আমাদেরকে দাম দাওনা কারণ আমাদের দামী গাড়ি নেই৷’
.
প্রিয়া এই কথা শুনেও কনভিন্স হয় না এবং বিভিন্ন মন্ত্রীকে ফোন দিয়ে চিৎকার চেচামেচি করতে থাকে।
.
এই ঘটনার বেশ কিছুদিন পর আকাশ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে দেখতে পায় প্রিয়া ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে বসে আছে। পূর্ব রাগের জের ধরে সে আকাশকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
.
প্রিয়া বাসায় এসে জানতে পারে তার ছোট বোন রিয়াকে কলেজে যাওয়ার পথে গুন্ডারা আক্রমণ করেছিলো৷ একজন সাহসী পুলিশ অফিসারের জন্য সে বেঁচে গেছে এযাত্রায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে সেই পুলিশ আহতও হয়েছে৷ সেই পুলিশকে রিয়া লাঞ্চের দাওয়াত দিয়েছে ধন্যবাদ বলার জন্য৷
.
দুপুরে সেই পুলিশ বাসায় আসলে প্রিয়া দেখে সে আর কেউ না। সে আকাশ৷ প্রিয়া নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং আকাশকে স্যরি বলে।
.
তারপর দুজনের মধ্যে প্রেম হয়ে যায় এবং তারা ব্যাংকক গিয়ে নেচে নেচে গান গায়, ‘পুলিশ ডাক্তারের প্রেমে পড়েছে… ও ম্যাজিস্ট্রেট…!’
.
কিন্তু প্রিয়ার বাবা এই প্রেম মেনে নিতে রাজি হয় না কারণ সে প্রিয়ার জন্য তার বন্ধুর ছেলেকে পছন্দ করে রেখেছে। সে আকাশকে মারার জন্য গুন্ডা পাঠায়, কিন্তু আকাশ তাদেরকে মেরে সাইজ করে দেয়।
.
প্রিয়ার বাবা বাধ্য হয়ে প্রিয়াকে বাসায় আটকে রাখে এবং প্রিয়া বন্ধ ঘরের ভেতর নিউমার্কেট থেকে কেনা দুটো সাড়ে তিনশো টাকার ফুলদানি ভেঙে ফেলে এবং কেঁদে কেঁদে বলে, ‘বাবা, আমি আকাশকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি৷ আমাকে যদি কেটে টুকরো টুকরো করে সমুদ্রেও ভাসিয়ে দেয়া হয়, তবুও আমার শরীরের প্রতিটা টুকরা চিৎকার দিয়ে বলবে, আকাশ আই লাভ ইউ।’
.
প্রিয়ার বাবা আকাশকে বলতে চায় যে, ‘তোর কত বড় সাহস তুই বামুন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়াস?’

কিন্তু সেটা বলতে পারে না। কারণ আকাশ ছয় ফুট দুই ইঞ্চি। আর প্রিয়ার বাবা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। উনার ভয় হয়, আকাশ যদি উলটা উনাকে বামন বলে ফেলে?
.
তাই তিনি আকাশের বাড়ি যান তার বাবাকে হুমকি দেয়ার জন্য। কিন্তু গিয়ে আকাশের বাবাকে দেখেই চিনতে পারেন৷ আকাশের বাবা এবং উনি একইসাথে একাত্তর সালে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন৷ পরে আর উনাদের যোগাযোগ ছিলো না।
.
হারানো সহযোদ্ধাকে পেয়ে উনি বুকে জড়িয়ে ধরেন, এবং আকাশের সাথে প্রিয়ার বিয়ে দিতে রাজি হন৷ তারপর পুলিশ অফিসার আকাশ এবং ডাক্তার প্রিয়া সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে!
.
অথচ গল্পটা এরকম হয়নি। পুরো বাংলাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। কেউ বলছে প্রিয়ার দোষ, কেউ বলছে- না, সব দোষ আকাশের।

প্রিয়া এবং আকাশের আর কখনো দেখা হবে না৷ প্রিয়া নিজের ভুলও বুঝতে পারবে না। প্রিয়ার বাবা তাদের ভালোবাসায় বাধা হয়েও দাঁড়াবে না। প্রিয়া তিন চারটা ফুলদানি ভাঙতে পারবে না আছাড় দিয়ে। তাদের দুজনের কখনো এক হওয়া হবে না।
.
বাস্তবতা বড্ড নির্মম। বাস্তবতায় শুধু ঘৃণা, রাগ, মারামারি আছে। বাংলা সিনেমার মত ভালোবাসা নেই।
.
Sohail Rahman